আ.লীগে ফেরার ‘সবুজ সংকেত’ মেয়র জাহাঙ্গীরের, সুযোগ সন্ধানীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

প্রকাশিতঃ 3:43 pm | September 13, 2022

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো:

হঠাৎ একটি ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বসে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সঙ্গে। ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন এই প্রতিবেদক। এই ছবিটিই কার্যত ইঙ্গিত দিচ্ছে জাহাঙ্গীর আলমের পুনরায় আওয়ামী লীগে ফেরার।

দলীয় সূত্র বলছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলীয় সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর দলে ফিরলেও সহসাই দলীয় কোন পদে আসছেন না এমন মতামতও এসেছে।

মূলত দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেতের পর নড়েচড়ে বসেন অনেকেই। ইতোমধ্যেই সেই প্রক্রিয়াও এগিয়েছে অনেক দূর। শিগগির এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও আসতে পারে। খবর সূত্রের।

জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন করেছেন। এই আবেদনে ইতিবাচক সাড়ার পরই তিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তবে সাক্ষাতে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ছবিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দেখা গেছে মেয়র জাহাঙ্গীরকে।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় দলীয় এক শ্রেণির সুযোগ-সন্ধানীদের রীতিমতো ‘মাথায় হাত’ পড়েছে। জাহাঙ্গীরের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার সুযোগে যারা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

দলের মতোই শেষতক জাহাঙ্গীর সিটি মেয়র পদ ফিরে পেলে এই সময়ে যারা নানা কারসাজির মাধ্যমে ফুলেফেঁপে উঠেছেন নিশ্চিত তারা ফেঁসে যাবেন- এই দুশ্চিন্তায় কারও কারও না কী ঘুমও হারাম হয়ে গেছে।

ইতোমধ্যেই বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে নিয়ে নানা মুখরোচক কথা ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। সেখানে বলা হয়েছে, এক সময় তিনি জাতীয় পার্টি করতেন। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসানের সঙ্গেও ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পরে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহর মাধ্যমে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেন। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেয়ে তিনি অনেককে চাকরিচ্যুত করেন এবং দফারফায় পুনরায় নিয়োগ দেন।

এরকম নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পর তিনি এখন খাদের কিনারায় গিয়ে ঠেকেছেন বলেও গুঞ্জণ ছড়িয়েছে। মেয়র পদে ফিরে এলে তার দশা কী হবে এ নিয়েও নানান কথা শোনা যাচ্ছে গাজীপুরের অন্দরে-বাইরে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ভারপ্তাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে জাহাঙ্গীর আলম সিটি করপোরেশন এলাকায় রাস্তাঘাট ও ড্রেনসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় ও উন্নয়নের নায়কও হয়ে উঠেন। এরমধ্যে অনেক কাজ সম্পূর্ণ হলেও বেশিরভাগ কাজই অসমাপ্ত হয়ে রয়েছে।

মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজে চরম স্থবিরতা নেমে আসে। অনেক কাজ বন্ধও হয়ে যায়। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র উন্নয়নে গতি আনতে পারেননি। ফলে এ নিয়ে হতাশ স্থানীয় নগরবাসী। তাদের মতে, সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র ও ‘উন্নয়নের নায়ক’ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে ফিরে এলে পাশার দান পাল্টে যাবে, এমন কথাও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। পরে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ও দলের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে দল। এরপর ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

কালের আলো/ডিএস/এমএম