টানা চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসতে আরও আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 1:15 am | September 18, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো: :

হ্যাটট্রিক জয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি, হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের সাহসী, দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রগতি-অর্জনে পুরো দেশের চেহারাই আমুল পাল্টে দিয়েছেন। বিশ্ব পরিমন্ডলে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছেন দেশকে। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে দলটি। এবার ঘনিয়ে আসা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে টানা চতুর্থ দফা এবং পঞ্চমবারের মতো নিজ দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে আরও আত্মবিশ্বাসী এই সরকারপ্রধান।

স্পষ্ট সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এত কাজ করার পরে জনগণ অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ পাশাপাশি নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না বলেও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার সাহসী ও বলিষ্ঠ বক্তব্য যেন আত্মবিশ্বাসেরই স্বাক্ষর বহন করে।

দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগশ্রেষ্ঠ নেতৃত্বে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। বহুল আকাঙ্খিত পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ একাধিক মেগাপ্রকল্প। উন্নয়নের সোপান বেয়ে এগিয়ে চলছে দেশ। সামনের ভোটে এগুলো হবে ট্রাম্পকার্ড।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদলের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার সুনিপুণ কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। বাঙালি জাতির বড় বড় সব অর্জন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তাই, জনগণকে অনুরোধ করবো আপনারা শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপর আস্থা রাখুন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকুন, পাশে থাকুন।’

জানা যায়, গত ১৩ বছরের টানা ক্ষমতায় দেশের প্রায় শতভাগ মানুষের ঘরে অন্ধকার তাড়িয়ে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছে সরকার। মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সর্বত্র রাস্তা-ঘাট পাকা, পুল-ব্রিজ-কালভার্ট, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান এক বাস্তবতা। গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ফলেই সব সম্ভব হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাষ্য হচ্ছে, ‘২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ পার করছে অভাবনীয় এক সোনালি অধ্যায়। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়ন স্বপ্নদ্রষ্টা।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের মতে, এই দীর্ঘ সময়ে দেশের অর্থনীতি শক্ত এক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির সামষ্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠে। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল যেখানে মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে উন্নীত হয়েছে ৪১৬ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ৩ হাজার ৭ মার্কিন ডলারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। খালি পায়ের মানুষ আর দেখা যায় না। আকাশ থেকে কুঁড়েঘর আর দেখা যায় না। দেশের রাস্তা-ঘাট বদলে গেছে। আজকের এই বদলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।’

‘করোনা মহামারির ভেতরেও দেশের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ রয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেট ছিল মাত্র ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার এখন সেই বাজেট ১১ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে। উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে দেশের মানুষ আগামীতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়, এমন আশাবাদী উচ্চারণ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানের। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, ‘দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নিয়ন্ত্রণে একমাত্র আওয়ামী লীগই সফলতা লাভ করেছে।’

রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির জটিল সব হিসাব মিলিয়ে শেখ হাসিনা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সঙ্কট ব্যবস্থাপনায় ম্যাজিক দেখিয়েছেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার ঘুমানোর সময় মাত্র ৫ ঘন্টা। ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা কাজ করেন দেশের ও মানুষের উন্নয়নের জন্য। ছুটির দিনেও তিনি বিরামহীন। পিপলস এন্ড পলিটিক্সের গবেষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের চতুর্থ কর্মঠ সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান।

মাস দুয়েক আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের সব সূচকে শেখ হাসিনার পরশপাথরের ছোঁয়া লেগেছে। একজন শেখ হাসিনা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে, সামাজিক উন্নয়নে, অর্থনীতির উন্নয়নে যেখানেই খোঁজা হবে, সেখানে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি দেশের বাইরেও নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

সূত্র জানায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারের জন্য বৈশ্বিক মহামারি করোনা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু করোনা মোকাবিলা করে একদিকে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা, অন্যদিকে জনগণের জীবন-জীবিকা সচল রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে একহাতেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি এমন এক পর্যায়ে দেশকে নিয়ে গেছেন যে, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশ হতে চায় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ উঠে আসে প্রায় সময়েই।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। অবশ্য চলমান সঙ্কট মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন সরকারপ্রধান। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদের সবাইকে খরচ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গাড়ির তেল খরচ করে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের ছোটাছুটি না করে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ বাড়ানো ও কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিস না কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করেছেন। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। শপিং মল, দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ হচ্ছে। সারা দেশে সব ধরনের আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি অফিসের সূচীতে পরিবর্তন এসেছে। সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ থাকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করার কথাও বলা হয়েছে।

এসব নিয়ে কিছুটা চাপে থাকলেও সম্প্রতি সংসদে আশার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘অর্থনীতির বহিঃখাতে কিছুটা চাপ অনুভূত হলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির শিল্প, সেবা ও কৃষিখাতের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশ খাদ্য ঝুঁকিতে নেই। আইএমএফও বলছে যে বাংলাদেশ সঙ্কটে নেই।’

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি এমপি বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য কিংবা জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক সংকট। এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার সর্ম্পক নেই। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সঙ্কটের সময় দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে। দেশ সেবার জন্য জনগণ শেখ হাসিনাকে আবারো সুযোগ দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় মানুষের কল্যাণ চান বলে সুদৃঢ় উচ্চারণ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপির। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেটা অবশ্যই জনকল্যাণমূলক। জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন। শেখ হাসিনার হাতে যতদিন দেশ থাকবে, বাংলাদেশ পথ হারাবে না।’

আগস্ট মাসকে দুর্দশার শেষ মাস হিসেবে উল্লেখ করে মাসখানেক আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষের কষ্ট দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কষ্ট পান। সাময়িক অসুবিধা স্থায়ী হবে না। আমরা আবার উন্নয়নের দিকে যাব। জিনিসপত্রের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দূরদর্শীতায় আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।’

দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মুন্সীয়ানায় ঠিকই চলমান এসব সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে সরকার। টানা চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় যেতে দলীয় সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও ব্যাপক সাহস জুগিয়েছে।

দ্বাদশ সংসদের ভোটের প্রচারণায় দেশজুড়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন স্মারকের বার্তা দৃঢ়তার সঙ্গেই সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হবে। দলীয় সভাপতির একনিষ্ঠতা, দূরদর্শীতা ও অদম্য গতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন এবং সেটি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দলকে কঠিন আত্মবিশ্বাসী করেই গড়ে তুলছে।

আওয়ামী লীগের এই দৃঢ়চেতা বিশ্বাসের ঢেউ সরকারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি হওয়ায় সামনের ভোটে জয়ের জন্য তেমন বেগ পোহাতে হবে না আওয়ামী লীগকে, এমন মত পর্যবেক্ষক মহলের।

কালের আলো/এএএমকে