চরম বিতর্কের মুখে শেরপুর ছাত্রলীগের সেই কমিটি স্থগিত

প্রকাশিতঃ 1:31 pm | January 29, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক | কালের আলো :

শেষ রক্ষা হচ্ছে না শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের নব-গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতিনের। চার বছর আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে লাগামহীন কটুক্তি করে মাত্র দু’দিন আগে দলীয় পদ পেলেও আর সেটি টিকিয়ে রাখতে পারছেন না তিনি।

ইতোমধ্যেই তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাতেই এ কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মতিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে রিপোর্ট জমা দিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন নির্দেশ দিয়েছেন।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন অনুমোদিত এ কমিটি প্রকাশের পর পরই মতিউর রহমান মতিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদকে জয়কে নিয়ে কটুক্তি করা সেইসব স্ট্যাটাস ফাঁস করে দেন দলীয় প্রতিপক্ষরা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে এসব স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন মতিন।

চরম বিতর্কিত ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী নেতাকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ফেসবুকে সরগরম করে তুলেন পদ বঞ্চিত নাজমুল ইসলাম সম্রাটের অনুসারী নেতা-কর্মীরা।

এসব নিয়ে রাতেই দৈনিক কালের আলো’তে ‘নেত্রীকে নিয়ে কটুক্তিকারী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে, বিতর্কে সোহাগ-জাকির’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। কালের আলো’র প্রকাশিত এ খবরে আবারো আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় ছাত্রলীগের রাজনীতির পরিমন্ডলে।

মূলত দৈনিক কালের আলোসহ দু’একটি অনলাইন গণমাধ্যমে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেয়ার খবরের প্রেক্ষিতেই শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

যদিও মতিউর রহমান মতিন দৈনিক কালের আলো’র কাছে দাবি করেন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ একটি মহলের প্রপাগান্ডা। ভূয়া ফেসবুক আইডি থেকে ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে এসব স্ক্রিনশট করা হয়েছে।’

মতিনের সমর্থনে একই সুরে কথা বলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনও। তিনি বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করেই কমিটি দিয়েছি এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি। মতিনের বাবা শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক। যারা কমিটি বঞ্চিত হয়েছে তারাই মূলত ষড়যন্ত্র করছে। এরাই মতিনের নামে ভূয়া আইডি খুলে এসব স্ক্রিনশট তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অভিযুক্ত মতিউর রহমান মতিনের পক্ষে সাফাই গাইলেও রাতেই ভোল পাল্টান। তাদের স্বাক্ষরে অনুমোদিত হয়েছিল যে কমিটি আবার তাদের কলমের খোঁচাতেই স্থগিত হয়েছে বিতর্কিত সেই কমিটি। কিন্তু কেন এবং কী কারণে শেষ মুহুর্তেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মতিনের পক্ষেই কথা বলছিলেন এ নিয়েও ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে দলীয় রাজনীতির পরিমন্ডলে।

এদিকে, কমিটি স্থগিতের ঘোষণায় পদবঞ্চিত শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সম্রাটের অনুসারী নেতা-কর্মীরা সোমবার (২৯ জানুয়ারি) হরতাল স্থগিত করেছে। এ বিষয়ে নাজমুল ইসলাম সম্রাট দৈনিক কালের আলোকে বলেন, কমিটি স্থগিত হওয়া প্রমাণ করে মতিন অভিযুক্ত। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে কিছুক্ষণের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা শেরপুরে এসে পৌঁছবেন। তাদের সম্মানে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

কালের আলো/এএ