শ্রমিক ধর্মঘটে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে রুল

প্রকাশিতঃ 3:33 pm | December 03, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির সময় অ্যাম্বুলেন্স ‘আটকের কারণে’ সাতদিনের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

আজ সোমবার জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো.আশরাফুল কামলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম জানিয়েছেন, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শককে ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ‘অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় মৃত্যু নবজাতকের’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে রিট দায়ের করা হয়।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মৌলভীবাজার বড়লেখা উপজেলার ওসি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে ২৮ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ কর্মবিরতি চলাকালে সাধারণ চালক, শিক্ষার্থীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে অ্যাম্বুলেন্সও আটকে দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

গত ২৯ অক্টোবর দৈনিকে আমাদের সময়ের ওই খবরে বলা হয়, ‘আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকরা দাবি আদায়ের নামে মুমূর্ষু এক নবজাতককে বহনকারী গাড়ি আটকে দেওয়ায় সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পথেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে সাতদিন আগে পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটি।’

গত ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটি বড়লেখা সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার মেয়ে। ৭ দিন আগে জন্ম নেওয়া শিশুটির এখনো নাম রাখা হয়নি।

নিহত শিশুটির চাচা আকবর আলী বলেন, রাত থেকে বাচ্চাটা কোনো কিছু খাচ্ছিল না, শুধু কাঁদছিল। সকালে শিশুটিকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত সিলেট নেওয়ার জন্য বলেন। চিকিৎসকের কথামতো বাচ্চাটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দিই।

আকবর আলী অভিযোগ করেন, ‌‘সিলেট যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার দরগাবাজারে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। একইভাবে দাসেরবাজার এলকায় তাদের আটকানো হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চান্দগ্রাম বাজারে আবার শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স চালককে মারধর করা হয়। শিশুটি এখানেই মারা যায়। পরে আমরা বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।’

কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ জানান, ‘ঘটনাটি অবশ্যই নিন্দনীয়। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ’

কালের আলো/ডিএম/এমএইচএ