অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে বেড়েছে সক্ষমতা, বিশ্বেও সেরা সেনাবাহিনীর স্বপ্ন সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 9:23 pm | November 16, 2022

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আকাশ ও সীমানা রক্ষায় সংযোজন হয়েছে দুরপাল্লার মিসাইল, ডিকটেশন যন্ত্র, মর্টার, রাডার নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রসহ আধুনিক প্রযুক্তি। একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী হিসেবে বিশ্বপরিমন্ডলে সুনাম-গৌরব অর্জন করেছে দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক এই বাহিনী।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বের গুণগত মান আরও বৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জনের জন্য নানামুখী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে গভীর মনোযোগী প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে শক্তি ও সক্ষমতা বেড়েছে নিজেদের। যারপরেনাই এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, হৃদয়তন্ত্রিতে তুমুল আলোড়ন তুলে এমন স্বপ্ন দেখেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ব্যপ্ত করেছেন সর্বজয়ী হওয়ার মানসিকতা।

ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান যেকোন হুমকি মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দৃঢ়তার সঙ্গেই নিজ বাহিনীর সদস্যদের পবিত্র সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছেন।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সেনানিবাসস্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের এমআর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানেও সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আশাবাদের আলোকবর্তিকার মতোই প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারে উদ্বেলিত করেছেন দেশপ্রেমিক সেনাদের। মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনি:শেষ প্রেরণায় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক প্রাজ্ঞময় নেতৃত্বের নিজেদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক পথযাত্রায় তিনি সংযোজন করেন নতুন প্রাণাবেগের।

এদিন সকালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে এম আর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হন কালার অর্জন করা ৯ ইউনিটের প্রধান ও সেনা সদস্যরা। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এ সময় ৩২ বীর এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আহসান হাবিব রাজীবের নেতৃত্বে একটি সম্মিলিত চৌকস দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং সেনাবাহিনী প্রধানকে সালাম প্রদান করেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান রেজিমেন্টাল কালারপ্রাপ্ত ইউনিটসমূহকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই বিশেষ দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই সাথে স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লক্ষ বীর শহিদদের।’

‘কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতা বেড়েছে-এমন উচ্চারণ করেন প্রগাঢ় লাল আলতার রঙে। সম্মোহনী নেতৃত্বগুণে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আধুনিক ও যুগোপযোগী সরঞ্জামাদি মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর দক্ষতা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও বিশ্বের আস্থা অর্জন করেছে।

ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হচ্ছে। আমাদের সামরিক শক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সেনাবাহিনীর অনেক আধুনিক সরঞ্জাম ও সমরাস্ত্র সংযোজন করা হয়েছে। সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক সময় বিশ্বের অন্যতম একটি সেরা সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হবে।’

অনুষ্ঠানে ঢোলের তালে তালে নাচের মুদ্রার মতোই যেন এগিয়ে আসতে থাকে সেনাবাহিনীর বাদক দলের সদস্যরা। এরপর একে একে ৯ টি ইউনিটের অধিনায়করা সেনাপ্রধানের কাছ থেকে রেজিমেন্টাল কালার বা ইউনিটের পতাকা বুঝে নেন। সেনাবাহিনীর দীর্ঘ ইতিহাসে এটিও একটি ঐতিহ্য। ইতিহাস বলে, যুদ্ধের সময় দল বা ইউনিট প্রধানের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য পতাকা বহন করতে হতো।

সেই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সেনাবাহিনীর যেকোন ইউনিট বা রেজিমেন্টের সফলতা উদ্দীপনা তেজোদীপ্তের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয় এই রেজিমেন্টাল কালার। এবার চট্টগ্রামের মাটিতে কালার পতাকা দেওয়া হয় ১৭ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, ২৪ বীর, ২৭ বীর, ২৮ বীর, ৩০ বীর, ৩১ বীর, ৩২ বীর এবং ৩৩ বীরকে। এজন্য দীর্ঘ ৫ বছর কঠোর অধ্যাবসায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ইউনিট সদস্যদের। তাই স্ব স্ব ইউনিটের সম্মান ধরে রাখতে ইউনিট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

সেনাবাহিনী অতীতের চেয়ে আরও আধুনিক উল্লেখ করে তিনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি যেকোন ইউনিটের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। যে ইউনিটসমূহকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান করা হয়েছে তা সমুন্নত রাখতে ইউনিটের সকল সদস্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইউনিটের মর্যাদা ও সুনাম উত্তরোত্তর আরও বৃদ্ধি পাবে।’

দায়িত্বশীলতার শাণিত শপথ আর সময়ের প্রতিটি স্পন্দনের ঘটমানতাকে সুনিপুণ দক্ষতায় নিজের জবানীতে তুলে এনে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই বাহিনীর সদস্যরা দেশ গঠন ও বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে