উৎকন্ঠা বাড়াচ্ছে ১০ ডিসেম্বর : অরাজক পরিস্থিতি ঠেকাতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিতঃ 9:00 pm | December 05, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

এগিয়ে আসছে শনিবার (১০ ডিসেম্বর)। ওইদিনের বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে ততই জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একাধিক শর্তে গণসমাবেশের অনুমতি দিলেও নয়া পল্টনেই সমাবেশ করতে গো ধরে বসে আছে দলটি। দলটির এমন অনড় সিদ্ধান্তের পেছনে ভিন্ন উদ্দ্যেশ্য রয়েছে বলে বারবার দাবি করে আসছেন সরকার দলীয় নীতি নির্ধারকরা। তবে নিজেদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের ভেন্যু নির্ধারণে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে দলটি।

যদিও সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘পুলিশ সোহরাওয়ার্দী ও তুরাগ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর মধ্যে অন্য নিরাপদ জায়গার কথা বললে তারা ভেবে দেখবেন।’ আবার, পুলিশ জানতে চাইলে তেমন জায়গার নাম বলতেও রাজি হয়নি বিএনপি।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) ডিএমপির সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে সোমবার মতিঝিল জোনের এডিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ্যানি বলেন, ‘তারা (ডিএমপি) গতকালও (রোববার) বলেছে— সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে। কিন্তু আমরা তাদের বারবার বলছি, হয় নয়া পল্টনে দিতে, না হলে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশে দিতে। আমরা মনে করি, আমাদের সমাবেশ আমাদের কার্যালয়ে হওয়া উচিত। তারা বলেছে, জানাবে। আমরা অপেক্ষা করছি।’

তবে রাজধানীর পুলিশপ্রধান, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) আবারও বলেছেন, রাজধানীতে মাঠ ছাড়া রাস্তাঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি বিএনপি পাবে না। গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিএনপিকে সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিয়েছি। আশা করছি, সেখানেই তারা সমাবেশ করবে।

নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘রাস্তাঘাটে সমাবেশের অনুমতি দিলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে যাবে। যান চলাচলই নয়, সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়ও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। মূলত এ কারণেই এসব স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া যায় না। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

গণসমাবেশ ঘিরে নজরদারি, চোখে চোখে সাইবার স্পেস
বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে এ বিষয়ে পুরোমাত্রায় তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চলমান রয়েছে তাদের নজরদারি। চোখে চোখে রাখা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার ওয়ার্ল্ড।

এসবের পাশাপাশি আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে অভিযান। এসব অভিযানে গ্রেফতারও হচ্ছেন অনেকে। অনলাইনে অপপ্রচার কিংবা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সে বিষয়েও তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।

জানা যায়, গত এক ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কোনও অসাধু চক্র কিংবা তৃতীয়পক্ষ যেন কোনও ধরনের সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের ক্রাইম বিভাগ এবং গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে রয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর। নেতিবাচক কিছু যেন কেউ না ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপর রয়েছে। সমাবেশ উপলক্ষে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার ইউনিটসহ সব ব্যাটালিয়নকে প্রস্তুত রেখা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ কোনও ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনায় রয়েছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সংগ্রহ করা হচ্ছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য। হোটেল রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জায়গাগুলো তল্লাশি করা হচ্ছে এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেখানে কাদের আনাগোনা। কেউ যদি কোনও বিশৃঙ্খলা কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে তাকে পুলিশ আটক করবে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত র‍্যাবও
বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যেকোনও ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব প্রস্তুত রয়েছে বলে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমাবেশকে ঘিরে যদি উদ্ভূত কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটার জন্য বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার ইউনিটসহ সব ব্যাটালিয়নকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য সাদা পোশাকেও থাকবেন র‍্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা।’

‘দেশে এখন সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে’ জানিয়ে র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সরকারি ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। র‍্যাব সাধারণত জঙ্গি দমন, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, অস্ত্রধারী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করে আস্থা অর্জন করেছে।’

দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান, বিদেশি স্থাপনা ও হাইকমিশন রয়েছে। ঢাকা শহরের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। শুধু এই জনসমাবেশ ঘিরে নয়, র‌্যাব সবসময় জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষাসহ দেশের ভাবমূর্তি যেন কখনও বিদেশিদের কাছে ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সচেষ্ট থাকে। যেকোনও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‍্যাবের সব ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।’

বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে র‍্যাবের পক্ষ থেকে রুটিন পেট্রল থাকবে, চেকপোস্ট থাকবে জানিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সেখানে কোনও ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা হয় কিনা, তা নজরদারিতে রাখা হবে। র‌্যাবের গোয়েন্দারাও সাইবার ওয়ার্ল্ডে মনিটরিং করছে। সেখানে কেউ উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নাশকতা করার চেষ্টা করছেন কিনা, সেটা নিয়েও কাজ করেছে সংস্থাটি। আমরা মনে করি, এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই চলবে। কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য র‌্যাব প্রস্তুত রয়েছে।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম