শ্যামলী পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের ভর্ৎসনা

প্রকাশিতঃ 1:22 pm | December 07, 2022

আদালত প্রতিবেদক, কালের আলো:

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত আদালতের নোটিশ রিসিভ না করা ও আহতদের কোনো ধরনের খোঁজখবর না নেওয়ায় শ্যামলী এন আর পরিবহনের মালিককে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

আদালত শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ রাকেশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের পরিবহন এক্সিডেন্ট করল অথচ আহতদের দেখতে গেলেন না, খোঁজখবরও নিলেন না। শুধু আছেন টাকা কামানো নিয়ে। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। আপনাদের মানবিকতা নেই। মানবিকতা অর্জন করুন, মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন।

এর আগে আদালতের তলবে হাজির হন শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ রাকেশ। আদালত তাকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আদালতের নোটিশ রিসিভ করেননি কেন?

তখন রাকেশ বলেন, ওই সময় দেশে ছিলাম না। আমরা জানতাম না।

তখন আদালত বলেন, আপনারা জানতেন না এটা অবিশ্বাস্য। আপনাদের গাড়ির ড্রাইভারের দোষ। তার কারণে এক্সিডেন্ট হয়েছে।

তখন গাড়ির মালিক বলেন, গাড়ির ড্রাইভার তো পলাতক।

আদালত বলেন, আহতদের খোঁজখবর নিয়েছেন? তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো খরচ দিয়েছেন? কোনো খরচ দেননি। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। মানবিক হোন। মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন।

এ সময় হাইকোর্ট এনা পরিবহনের প্রসঙ্গে বলেন, এনা পরিবহন যখন রাস্তায় চলে কাউকে পরোয়া করে না। যত্রতত্র গাড়ি চালায়। আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

আদালত বলেন, পরিবহন মালিকরা এত ক্ষমতাশালী কোনো ব্যক্তি মারা গেল, কে আহত হলো তা দেখার সময় নেই। পুলিশও আপনাদের নাগাল পায় না।

আপনার ড্রাইভারের কারণে এত মানুষ মারা গেলেন, আহত হলেন। অথচ একটু দেখারও সময় পেলেন না। আপনারা আছেন শুধু টাকা কামানো নিয়ে। আপনাদের এত ক্ষমতা যা ইচ্ছে তাই করেন। মালিকরা মিলে দেশটাকে কি লুটেপুটে খেতে চান?

পরে আদালত নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয় সংক্রান্ত খরচ নিরূপণ করে আহতদের হস্তান্তর করার জন্য উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সমঝোতা করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এক সপ্তাহ পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালত দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী এন আর পরিবহনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম।

এর আগে গত ৭ আগস্ট অ্যাম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবজি বিক্রেতা আয়নালের পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের ফান্ড গঠনে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত।

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

কালের আলো/এসবি/এমএম