দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতে তিন বিষয়ে গুরুত্ব শেখ হাসিনার
প্রকাশিতঃ 11:37 am | January 16, 2023

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো:
এগিয়ে আসা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজ দলের বিজয় নিশ্চিতে তিনটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এসব কাজ বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের পুরোদমে মাঠে নেমে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ভোটে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো জিতবে এ বিষয়ে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জনবিচ্ছিন্নদের আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে গণভবনে যৌথ মুলতবি সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাদের এসব জরুরি বার্তা দিয়েছেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। দলের যৌথ মুলতবি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের মাধ্যমে দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিএনপির শাসনামলের চিত্র ও আওয়ামী লীগের শাসনামলের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরতে বলেছেন। সবাই বিস্মৃতিপ্রবণ হওয়ায় সহজেই উন্নয়নের বিষয়গুলো ভুলে যায়। তাই উন্নয়নের বিষয়ে প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছেন সরকারপ্রধান।

এখন আর বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এসব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আগামী নির্বাচনে আমাদের জয়ী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা কে কী করছেন, সব খবর আমার কাছে আছে। তাই সব কিছু ভুলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের জন্য কাজ করুন।’
বৈঠক সূত্র জানায়, যৌথসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের মধ্য থেকে কেউ বক্তব্য দেননি। জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় ২০ জন সদস্য বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেছেন তাদের বক্তব্যে। সেসব বক্তব্যের নোট নেন প্রধানমন্ত্রী। রুদ্ধদ্বার ওই সভায় সবার বক্তব্য শেষ হলে সমাপনী বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, সবাইকে মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে, নিজেদের বিভেদ ভুলতে হবে। দ্বন্দ্ব দূর করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যেকোনো মূল্যে। এ সময় বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আচরণে আন্দোলন-সংগ্রাম যে কেউ করতে পারে। এতে সরকার পরিশুদ্ধ হবে। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতা দখলের, সেখানে জনগণের কল্যাণ নিহিত নেই। বিএনপি খুনির দল। ওই দলের অত্যাচার-নির্যাতন আওয়ামী লীগকেই বেশি সহ্য করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে।’
উপদেষ্টা ও জাতীয় কমিটির নেতা যারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদের মূল কথা হচ্ছে, ২০২৩ সালের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সংগঠনের তৃণমূলকে শক্তিশালী করা। তারা দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা চান। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, ‘যৌথসভায় নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) খুবই আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। এর আগে এমনটা মনে হয়নি।’ ওই নেতারা বলেন, ‘তিনি আমাদের বলেছেন আগামীতে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেছেন, আমরা অনেক কাজ করেছি। এই কাজের সুফল জনগণ পাচ্ছে এবং জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। তার কোনো বিকল্প নাই।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। তারা কিন্তু ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনে ২৯ আসন পেয়েছিল।’
বৈঠক সূত্র বলছে, জাতীয় কমিটির নেতাদের জেলায় জেলায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি, প্রয়োজনে দলীয় সভাপতির কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ নির্বাচনে পরাজিত করতে পারবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে হবে। সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। ফলে আমলনামা দেখে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমার কাছে বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া তথ্য রয়েছে। যারা ভালো কাজ করেছেন, যারা জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, ভোট চান, জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাদের চায়, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে যাদের সুম্পর্ক নেই, এলাকায় যান না, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
কালের আলো/এমএএএমকে