পথশিশুদের কৃমিনাশক কার্যক্রমের আওতায় আনার উদ্যোগ স্বাস্থ্যের ডিজির

প্রকাশিতঃ 5:14 pm | January 17, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পথশিশুদের কৃমিনাশক টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেছেন, কৃমি পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০০৫ এর সঙ্গে বর্তমান সময়কে তুলনা করলে বুঝা যায় এতে আক্রান্তের হার ৮০ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ কৃমি নাশক টিকা একটি কার্যকর পদ্ধতি। যা আমাদের কৃমিমুক্ত দেশ গড়ার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে এই কর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র স্কুলগামী শিশুরা টিকা পাচ্ছে। এর বাইরে থাকা শিশুরা এখনও কৃমিতে ভুগছে। এই অবস্থায় স্কুলে না যাওয়া ছিন্নমূল শিশুদের টিকার আওতায় আনাটা একটি চ্যালেঞ্জ। করোনাকালে আমরা রেলস্টেশনে গিয়ে ছিন্নমূল মানুষদের টিকা দিয়েছি। এক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করে দেখবো।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম-সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বেদে শিশুদের কৃমিনাশক খাওয়ানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, সমাজের পশ্চাৎপদ অংশের শিশুরা এই কর্মসূচির বাইরে থেকে যাচ্ছে। যেমন বেদে সমাজের শিশুরা। তাদের জন্য আমরা আলাদা ব্যবস্থা করবো। প্রয়োজনে আলাদা ক্যাম্পেইনের মধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হবে।

কৃমি বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিজি বলেন, কৃমির ওষুধ নিয়ে নানা রকমের কুসংস্কার রয়েছে। গরমকালে খাওয়া যাবে না, শীতে খাওয়া যাবে না, সকাল বা বিকেলে খাওয়ানো যাবে না ইত্যাদি-ইত্যাদি। এই অবস্থায় অবিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, শিশুদের যেকোনো সময় কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে ভরা পেটে খেতে হবে।

এ সময় দেশে কৃমির টিকা কার্যক্রম বিদেশি সহয়তায় অনুষ্ঠিত হয় জানিয়ে ভবিষ্যতে সাহায্য না পেলে নিজেদের বরাদ্দ পাওয়া বাজেট থেকেই এটি সরবরাহ করা হবে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম ধাপে দেশের ৪৪টি জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ৫-১১ বছর বয়সী সকল শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২-১৬ বছর বয়সী সকল শিশুকে ১ ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমক্স ৫০০ মিলিগ্রাম) ভরা পেটে সেবন করানো হবে। প্রথম ধাপে ওষুধ সেবনকারী শিশুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ।

এতে কার্যক্রমের লক্ষ্য তুলে ধরে অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদযাপন করার লক্ষ্য হচ্ছে স্কুলগামী, স্কুল বহির্ভূত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, পথ শিশু, কর্মজীবী শিশুসহ সকল শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে সেবন করানো। একইসঙ্গে কৃমির পুণঃসংক্রমণ রোধকল্পে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। এমন শিশুদের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্যান্য পরজীবী বাহিত রোগব্যাধি থেকেও পরিত্রাণ পাবে।

ডা. নাজমুল বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য মতে, কৃমির সংক্রমণ বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। শূন্য থেকে চার বছর বয়সীদের ৭ শতাংশ, ৫-১৪ বছর ৩২ শতাংশ, ১৫-২৪ বছর ১৫ শতাংশ, ২৫-৪৪ বছর ৭ শতাংশ, ৪৫-৫৪ বছর ৫ শতাংশ এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪ শতাংশ। এই জরিপের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মধ্যে এই কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছর প্রথম ধাপে ৪৪টি জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২-১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমক্স ৫০০ মি.গ্রা.) ভরা পেটে খাওয়ানো হবে। প্রথম ধাপে ওষুধ সেবনকারী শিশুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে কর্মসূচিটি ২০০৫ সালে প্রথম বারের মতো ৩ জেলায় নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে জুন ২০০৭ পর্যন্ত ১৬ জেলায়, মে ২০০৮ পর্যন্ত ২৪ জেলায় ও নভেম্বর ২০০৮ থেকে ৬৪টি জেলায় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমটি সম্প্রসারিত করা হয়। শুরুতে এই কর্মসূচিটি শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে সীমিত রেখে চালু করা হয়। পরে লক্ষ্য করা যায়, ৫ বছর বয়সী অনেক শিশুই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যায়, আর তাই ২০১০ সাল থেকে ওই কর্মসূচিতে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২২ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৪৪টি জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সপ্তাহব্যাপী শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ সেবন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

কালের আলো/বিএএএ/এমএম