দিনে রিকশা চালিয়ে রাতে মোটরসাইকেল চুরি করতো তারা

প্রকাশিতঃ 8:48 pm | January 17, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন চক্রের সদস্যরা। এরপর টার্গেট করা বাড়ির গ্যারেজের তালা ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি করতেন তারা। এভাবে চক্রটি গত ১০ বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত পাঁচশ দামি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বেলদারহাট গ্রামের মো. সুবহান ব্যাপারীর ছেলে জসিম ওরফে সোহাগ (৩৫)।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া বটতলা এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্তে এই চোর চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার মহজনপুর এলাকা থেকে চোর চক্রের মূলহোতা জসিম ওরফে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবারও অভিযান চালানো হয়। অভিযানে জসিমের চার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন জসিমের অন্যতম সহযোগী মো. হারুন (২৮), আশিক বিশ্বাস (১৯), মো. রাজীব (২০) ও মো. মহসীন (২০)। তাদের সবার বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে মিরপুরের একটি বাসার গেইট কেটে দুটি মোটরসাইকেল চুরি করা হয়। পরে এ সংক্রান্ত একটি মামলা হলে সেই মামলার সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়েই এই চক্রের মূল হোতা জসিমের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে গত ১৪ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

জসিম এর আগেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কারাগারে যাওয়ার কিছুদিন পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যেতেন জসিম। এরপর আবারও মোটরসাইকেল চুরির পেশা চালিয়ে যেতেন। তার একটি দল রয়েছে। সেই দলের সদস্য সংখ্যা ২০ জন। এই ২০ জনের দলটি কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত। যারমধ্যে একটি গ্রুপ মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। পরে ওই গ্রুপটি অন্য গ্রুপের কাছে চুরি করা মোটরসাইকেল হস্তান্তর করে। এরপর ওই গ্রুপটি সেই মোটরসাইকেলগুলো রং করে এবং নম্বরপ্লেট বদলে বিক্রির জন্য আরেকটি গ্রুপের কাছে দিয়ে দিত। ২০১৩ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রটি। এই ১০ বছরে অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় জড়িত জসিম।

উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, গ্রেফতার জসিমের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ১২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে ১০ বার কারাগারেও যায়। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে কারাগার থেকে ছাড়া পায় সে। তবে প্রতিবারই জেল থেকে বের হয়ে আবারও মোটরসাইকেল চুরিতে জড়িয়ে পড়ে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, জসিমের বাবা একজন কৃষক। মাদারীপুর জেলার বেলদারহাটের গ্রামের বাড়িতে কৃষিকাজ করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তার ছেলেরা সবাই অপরাধ জগতে বেপরোয়া। জসিমের বড় ভাই ডাকাত হানিফ ২০১৮ সালে এবং তার ছোট ভাই ডাকাত ইয়াসিন ২০১৪ সালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে গিয়ে মারা যায় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ডিসি জসীম উদ্দীন মোল্লা জানান, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যমতে এই চক্রের আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- হারুন, মহসিন, রাজিব ও আশিষ চন্দ্র বিশ্বাস।

কালের আলো/বিএএ/এমকে