হুজির নেতৃত্বে লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে যুদ্ধ করা ফখরুল!
প্রকাশিতঃ 3:45 pm | January 28, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। ১৯৮৮ সালে আফগান যুদ্ধে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানে যান। এরপর তিনি আফগানিস্তানে ট্রেনিংয়ে শেখেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা। ওই সময়ে ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করে। অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা ফখরুল ইসলামসহ সংগঠনটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতাররা হলেন- ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানায় সিটিটিসি।
আসাদুজ্জামান জানান, হুজির মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
আফগানিস্তান থেকে জঙ্গি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হুজি নেতা মো. ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় তিনি দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। তিনি পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচিতে ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার। মুফতি জাকির জিহাদের দাওয়াত দিলে ফখরুল ইসলাম দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান।
ফখরুল ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনা শেখেন। ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি করতেন।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ওই সময়ে ফখরুল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান। প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে আসেন। পরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সনে বাংলাদেশে চলে আসেন।
সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্বশূণ্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
ফখরুল সাংঠনিক কার্যক্রম স্বশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে অব্যাহত রাখেন। তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে এনক্রিপটেড আ্যপ Bip ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করেন। যে কোনও সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন।
বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেফতার ব্যক্তিরা। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেফতার আসামি মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তাদের সংগঠনে রিক্রুটের উদ্দেশ্যে এবং জিহাদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন মোটা অংকের টাকা অনুদান প্রদান করেন।
গ্রেফতার অপর আসামি হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড আ্যপ ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ’মোরা সত্যের সৈনিক’এর এডমিন ‘অস্থায়ী মুসাফির’ হিসাবে ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি পরিচালনা করে।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন আ্যপসে নিজেকে মামুনুল হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করেন। হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন টেলিগ্রাম আ্যপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড আ্যপের প্রাইভেট চ্যানেল ’একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ’একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড আ্যপ্সের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছে।
পুনরায় হুজি সংগঠনের পর রোহীঙ্গা ক্যাম্পে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়েছে চক্রটি। সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের তাদের দলে নিতে তারা কাজ করেছেন বলেও জানান সিটিটিসি।
কালের আলো/এসবি/এমএম