বিজিবি’র নতুন ডিজির আশাবাদী বার্তা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাখতে চান সক্রিয় ভূমিকা
প্রকাশিতঃ 10:34 pm | January 30, 2023
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
মাত্র একদিন আগে মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন ২২৭ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালকের (ডিজি)। ঠিক পরদিনই সোমবার (৩০ জানুয়ারি) তিনি ছুটলেন বাঙালির পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়ায়। যেখানকার সুমৃত্তিকায় ঘুমিয়ে আছেন বাঙালির মুক্তির দিশারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির মহানায়কের সমাধিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে নিবেদন করলেন গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর ওপর আস্থা রাখায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সীমান্তরক্ষাসহ ভবিষ্যতে বিজিবি’র ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালনের দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন।
এসব ঘটনাপ্রবাহ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরের, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এ সময় অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিজিবির এ নতুন ডিজি। সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উচ্চারণ করেছেন কঠোর হুঁশিয়ারি। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের উপর দিয়েই যে প্রতিনিয়ত বিজিবিকে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেটিও মোটা দাগে প্রোজ্জ্বল করেছেন। গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন সীমান্ত পরিস্থিতি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অখণ্ডতা রক্ষার মহান দায়িত্ব দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে পালনের বিষয়টিও জানান দিয়েছেন।
ত্রিমাত্রিক এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজিবি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।’ সীমান্তরক্ষাসহ দেশের মানুষের কল্যাণে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিজিবি সদর দপ্তর জানায়, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছেই বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর ফাতেহা শরীফ পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ু ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে মহাপরিচালক বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।
সৌভাগ্যবান মনে করছেন নিজেকে, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতায় বেড়েছে সক্ষমতা
পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। স্বভাবতই বাঙালির প্রাণের তীর্থ টুঙ্গিপাড়ার সঙ্গে রয়েছে আত্মিক সংযোগ। বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে শ্রদ্ধায় অবনতচিত্তে দাঁড়িয়েছেন বহুবার। স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন বাংলার রূপকে। বিশ্বমানের আধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবেও কৃতজ্ঞচিত্তেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হিমালয়সম ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে।
নিজের সেই অনুভূতির কথা জানিয়ে বিজিবি ডিজি বলেন, ‘বিজিবি মহাপরিচালক হিসেবে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরে আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করছি। সেই সাথে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যিনি আমার ওপর আস্থা রেখে বিজিবি’র মতো ঐতিহ্যবাহী এই বিশাল বাহিনীর মহাপরিচালক হিসেবে আমাকে ন্যাস্ত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘২২৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনী বাংলাদেশের ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমেই দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন থেকেই বিজিবি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং বিভিন্ন সময়ে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে কাজ করে আসছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিজিবির সক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি করেছেন উল্লেখ করে নতুন ডিজি বলেন, ‘বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ফলে বিজিবি এখন জলে, স্থলে ও আকাশপথে যেকোনো অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্বাবধানে বিজিবি তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সীমান্তরক্ষাসহ ভবিষ্যতে বিজিবি’র ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হবে।’
এর আগে সকালে বিজিবি মহাপরিচালক পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের ‘সীমান্ত গৌরব’ এ মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে কী বলেছেন ডিজি?
সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত মাদক দেশে প্রবেশ করছে। মাদক আসা বন্ধে বিজিবির নতুন মহাপরিচালক হিসেবে আপনার ভূমিকা কী থাকবে? প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, মাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ‘জিরো টলারেন্স’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত। বাইরে থেকে মাদক এসে দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে নষ্ট করে দেবে, এটি আমরা কখনোই চাই না।
সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। দেশে মাদক প্রবেশ বন্ধে, শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে যা করণীয়, তা অব্যাহত থাকবে।
বিজিবি সবসময়ই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের উপর দিয়ে দায়িত্ব পালন করে জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে কখন কী হবে আসলে এটা বলা যায় না। কিন্তু মিয়ানমার সীমান্তে বান্দরবান এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা চলছে। আমাদের বাহিনীর যে সদস্যরা আছেন তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে বিজিবির উপর যে বিশাল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা সব সময় নিষ্ঠার সঙ্গে বিজিবি পালন করে আসছে, ভবিষ্যতেও পালন করা হবে। সীমান্তের পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়ে এটাকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।’
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যে বাহিনী, তাদের মধ্যে অনেক দিন ধরেই গোলাগুলি চলছে। তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবির এ নতুন মহাপরিচালক বলেন, ‘যে পরিস্থিতি রয়েছে তা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে এবং সুন্দরভাবে ট্যাকেল করতে আমরা সক্ষম।’
অরক্ষিত সীমান্ত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজিবির মূল দায়িত্ব দেশের সীমান্ত রক্ষা করা। সীমান্তে অরক্ষিত জায়গা যদি থেকে থাকে, দুর্বল দিক চিহ্নিত করে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
কালের আলো/এমএএএমকে