মনোনয়নে আমলনামায় গুরুত্ব আওয়ামী লীগের
প্রকাশিতঃ 10:19 am | February 08, 2023
ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন দলীয় সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুখ দেখে দলীয় মনোনয়ন মিলবে না। জরিপ কিংবা অতীতের আমলনামা দেখে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন দলীয় প্রধান। আগামী জাতীয় নির্বাচন বেশ কঠিন হবে। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ থাকবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সাফ সাফ এসব কথা জানিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ফলে অযোগ্য ও অজনপ্রিয়রা দ্বাদশ ভোটে আর নৌকা পাচ্ছেন না এই বিষয়টিও খোলাসা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় চমক দেখাবেন। এজন্য ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। এতে করে কপাল পুড়তে পারে প্রায় শতাধিক সংসদ সদস্যের। জনপ্রিয় নতুন মুখ স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন তাদের। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ব্যাপক ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় আশঙ্কা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের তিনি সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যপী সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা ভাবনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন সহজ হবে না। নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। সে অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য উজ্জীবিত করতে হবে। ভোটারদের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের এই ১৪ বছরের সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। মনে রাখবেন, এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ষড়যন্ত্র হতে পারে, অপপ্রচার হতে পারে। নির্বাচনের আগে দেশে এক ধরণের অরাজকতা তৈরির চেষ্টা হতে পারে। এসব বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো ষড়যন্ত্র, অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, মনে রাখতে হবে দলের মনোনয়ন বোর্ড আছে। এই পার্লামেন্টারি বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে সেটাই চূড়ান্ত। সবাইকে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। নির্বাচনে বিএনপি আসবে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডগুলোও জনগণের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরতে বলেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বিএনপি গঠন করেছিল। যেহেতু জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ; তাই তার তৈরি রাজনৈতিক দল বিএনপিও অবৈধ। এ বিষয়গুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য জানান, সভায় শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বৈঠকে বলেছেন, ‘আপনাদের সবার আমলনামা আমার হাতে আছে, অন্যান্য নির্বাচনে আমরা কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দিয়ে তুলে এনেছি। আপনারা যেমন সাপোর্ট চেয়েছেন দিয়েছি, কিন্তু এবার কোনো রকম সাপোর্ট দেওয়া হবে না। নিজের যোগ্যতায় নিজেই জিতে আসতে হবে। আর আপনাদের আমলনামা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে। জরিপের মাধ্যমে আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। এখনই মাঠে যান, ভোটারদের কাছে ভোট চান।’
প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের এলাকামুখী হতে বলেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজ চলছে, চলবে। কিন্তু মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। আমাদের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব উন্নয়ন আছে, সেসব নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগে বড় পরিবর্তন আসছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত সংসদ সদস্যরা কাটা পড়বেন। তাদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তির প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে।
দলীয় হাইকমান্ড মনে করছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে আগাম সেই বার্তাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দেশ-বিদেশে সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে এমন প্রত্যাশা হাইকমান্ডের। শেষতক বিএনপিও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নির্বাচনে অংশ নেবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীর ওপরই ভরসা রাখতে চান শেখ হাসিনা।
কালের আলো/ওয়াইএ/এমএএএমকে