আইজিপির বার্তায় থানাকে সেবার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরের মিশনে ‘টিম ডিএমপি’

প্রকাশিতঃ 12:45 am | February 11, 2023

গোলাম কিবরিয়া মন্ডল ও ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:

পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই থানাকে সেবার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রূপ দেওয়ার কড়া বার্তাই দিয়েছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। মানবিক আলোর অপরূপ নকশায় সাফ সাফ বলেছিলেন ‘পুলিশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে থানার আচরণের ওপরই। এজন্য স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে থানার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব রাখা হবে। দেশের সম্মানিত নাগরিকরা যাতে সহজে, নির্ভয়ে থানায় আসতে পারেন, তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন এবং সেবা গ্রহণ করতে পারেন সে ব্যাপারে আমি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি।’

কঠিনকে মুঠিবদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জনে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সমৃদ্ধ-উন্নত ও স্মার্ট পুলিশ গড়ে তুলতে বরাবরই এমন উচ্চারণে অনড় থেকেছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সব প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে অসম সাহসে মানবতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থানার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দিয়ে চলেছেন কঠোর নির্দেশনা। প্রগাঢ় উপলব্ধিতে এই ধ্রুব কঠিন সত্যকেই যেন নিজেদের ভেতরে ধারণ করেছেন প্রায় সোয়া দু’লক্ষ সদস্যের বিশাল পুলিশ বাহিনী। শিকড়সন্ধানী অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ পুলিশের বৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও (ডিএমপি)। নিজেদের চেতনার মর্মমূলে তাঁরা গ্রোথিত করেছেন আইজিপির কড়া নির্দেশনা। পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনা আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবায়নে চিরায়ত পুলিশিং’র আঁধার তাড়িয়ে থানায় সেবার মানোন্নয়নে আন্তরিক ও সচেষ্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। সেবাপ্রার্থী বা কোন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে পুলিশি হয়রানির শিকার না হন সে লক্ষ্যে তিনি তদারকি বাড়িয়েছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘টিম ডিএমপি’কে যেন ঐকান্তিক মিলনের শপথেই এক সুতোয় গেঁথেছেন রাজধানীর পুলিশপ্রধান। পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাক্সিক্ষত সেবার মান বাড়াতে তৎপর রয়েছেন। একাধিকবার বলেছেন, ‘কনস্টেবল থেকে কমিশনার সবাই মিলে আমরা একটি টিম। একটাই চাওয়া, আমরা সবাই মিলে পুলিশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে ২ কোটি নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। ভালো কাজ করলে আপনাদের পাশে থাকবো। কিন্তু অপকর্মে জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য শুভ চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে অন্ধকার দূর করে নিবিষ্ট মনে সত্য ও মঙ্গলময় কাজের ব্রত নিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। সংশ্লিষ্টদের কেবলমাত্র তিনি পরামর্শ বা সৎ উপদেশ দিয়েই বসে থাকেননি। নিবিড় মনিটর করেছেন মহানগরীর ৫০ টি থানার কর্মযজ্ঞ। প্রতিটি থানায় যে মামলা বা জিডি হচ্ছে, তার বাদীর সঙ্গেও কথা বলে সেখানে তাঁরা কী ধরনের সেবা পেয়েছেন, তা জানতে তাঁর অফিস থেকে যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি থানায় জিডি বা মামলা করতে গিয়ে কোনও পুলিশ সদস্যের নেতিবাচক আচরণ কিংবা তারা টাকা-পয়সা চাচ্ছে কিনা সে বিষয়েও ভুক্তভোগীদের ফোন করে খোঁজ-খবর নিচ্ছে ডিএমপি সদর দপ্তর।

ডিএমপির প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়টিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। যখনই তিনি মনে করেছেন থানার একটি বিষয়ে আলাদা নজর দেওয়া দরকার, তখনই তাদের ডেকে এনেছেন। বিভিন্নভাবে তাদের মোটিভেট করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার পরিস্কার বলে দিয়েছেন- মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, কাজ না করে ডিএমপিতে চাকরি করা যাবে না। আন্তরিকভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ডিএমপিকে কাক্সিক্ষত বন্দরে নোঙর করতে তিনি ব্রত হয়েছেন। মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল সংরক্ষণ ও আলামত সংগ্রহ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। পেশাদার অপরাধীরা যাতে বারবার অপরাধ করতে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়িয়েছেন।

মহানগর পুলিশে চিরায়ত প্রথা ভেঙে দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুক বিবর্ণহীনতার অদৃশ্য চাদর সরিয়ে জীবনের খেরোখাতার পাতা উল্টিয়ে সম্মুখসমরে আলোর পথের যোদ্ধা হিসেবেই নিজেদের উপস্থাপনের তাগিদও দিয়েছেন।

‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ডিএমপি জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে সুচারূভাবেই। ‘টিম ডিএমপি’ অপরাধ দমনের পাশাপাশি অপরাধভীতি দূর করেছে। কেউ অপরাধ করে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। অপরাধের মাত্রা যেমন কমেছে আর অপরাধ করার পর জড়িতদেরও গ্রেপ্তারেও নিজেদের সক্ষমতা বেড়েছে। পুলিশের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে- এ ধারণা তৈরি হয়েছে সাধারণের মন-মননে।

সূত্র জানায়, ডিএমপিতে প্রায় ৩২ হাজার পুলিশ ৫০টি থানার মাধ্যমে দু’ কোটি নগরবাসীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে একদিন-প্রতিদিন। অপরাধ তদন্ত ও রহস্য উন্মোচনে সাফল্যসহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তায় অংশ নিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে তাঁরা। মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আসামি গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনাও হয়েছে অতীত। এখন ডিজিটালাইজেশনের সময়ে প্রযুক্তিগত প্রসারের ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে তদন্তকারীরা বিভিন্ন অপরাধজনিত ঘটনার রহস্য উন্মোচন করছেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে কনক্লুসিভ এভিডেন্সের মাধ্যমে অপরাধীকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। আবার অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধের ধরন পাল্টাচ্ছে। অনেক অপরাধী আবার সাইবার অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। এসব ব্যাপারেও সজাগ রয়েছে ডিএমপি। তাঁরা এসব ঘটনা প্রতিরোধেও নিজেদের পেশাদারিত্ব ও সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক হৃদয়তন্ত্রিতে গেঁথেছেন মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক উক্তি- ‘তোমরা জনতার পুলিশ হও। মানুষ যেন নির্ভয়ে তোমার কাছে যেতে পারে। তোমরা শাসকের পুলিশ না, পাকিস্তানি পুলিশ না, ব্রিটিশ পুলিশ না।’ ডিএমপিকে এমনভাবেই তৈরি করতে আইজিপির গাইডলাইনে একাগ্রচিত্তেই কাজ করে চলেছেন বর্তমান ডিএমপি কমিশনার। তাঁর একটিই প্রত্যাশা- রাজধানীবাসী যেন নিজেদের দু:সময়ের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে পুলিশকেই মনে করে।

ডিএমপি’র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, ‘থানায় স্বাচ্ছন্দ্যে পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। প্রতিটি থানায় ডিউটি অফিসারের রুমে সিসিটিভি মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া যারা জিডি বা মামলা করছেন তাদের ডিএমপি থেকে ফোন করা হচ্ছে। জানতে চাইছে মামলা বা জিডি করতে তাদের কোনও অর্থ দিতে হয়েছে কিনা কিংবা থানায় পুলিশের আচরণ কেমন ছিল ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে থানায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

ডিএমপি সূত্র জানায়, কেবল থানা পুলিশ নয় রাজধানীর নগরবাসীর নিরাপত্তায় দিন-রাত সমান তালেই কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সবাই বলিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে জনগণের নিরাপত্তায়। অনলাইন জিডি চালু থাকায় যে কেউ অনলাইনে জিডি করতে পারছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সার্টিফিকেট অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করলে দেওয়া হচ্ছে। হ্যালো অ্যাপ নামে একটি অ্যাপ চালু রয়েছে যেখানে যে কেউ নিজের পরিচয় গোপন রেখে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তি, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয় জানাতে পারছেন। এছাড়া ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়েও পুলিশি সেবা মিলছে সহজেই।

করোনাকালে নিজেদের ধারাবাহিক কর্মযজ্ঞে প্রজ্বলিত মানবিক পুলিশের মশাল হাতে নিয়ে আপন মহিমায় পথ চলে পুরো বিশ্বকে নিজেদের সক্ষমতার কথা জানান দিয়েছে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নেতৃত্বাধীন ‘জনতার পুলিশ’। করোনাকালে পুলিশের বদলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে আত্মিক শক্তি সঞ্চারও হয়েছে। অন্তর্নিহিত শক্তিতে নিজেদের সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধিতে ঋদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশ। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও বিশ্বাস অর্জন করেছে ডিএমপিও। ফলত খোলনলচে পাল্টে তাঁরা উজ্জ্বল করেছেন নিজেদেরও।

কালের আলো/ডিএস/এমএম