ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বর্ণিল প্লাটিনাম জুবিলি, কমান্ড মেনে চলায় গুরুত্ব সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 10:39 pm | February 15, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন গর্বিত সৈনিক হিসেবেই শুরু করেছিলেন স্বপ্নযাত্রা। সময়টি প্রায় ৩৯ বছর আগে। আধেয় ইতিহাসের সেই সুখস্মৃতি আজও যেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র মাঝে ছড়িয়ে দেয় হীরক দ্যুতি। গেল বছর তিনি হয়েছিলেন এই রেজিমেন্টের ১৬ তম কর্নেল কমান্ড্যান্ট। অর্জনের আলোকমালায় দেশপ্রেমের তুঙ্গ-তরঙ্গে সত্য-সুন্দর ধ্বনি উচ্চকিত করেছেন বরাবরই। সতের কোটি মানুষের গর্ব, আস্থা আর বিশ্বাসের স্বপ্ন সারথি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দক্ষতায়, দৃঢ়চিত্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আত্মমর্যাদায় ঋদ্ধ ও আলোকিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ইতিবাচকতার অভিমুখে পূর্ণ করেছে গৌরবময় পথযাত্রার ৭৫ বছর, প্লাটিনাম জুবিলি। সর্বাধুনিক জ্ঞান-প্রযুক্তির সামর্থ্যে প্রতিনিয়ত জানান দিয়েছে নিজস্বতার অগ্রণী ও স্বকীয় অস্তিত্বের। অভিজ্ঞতা ও অর্জনের স্বর্ণালী সংযোগসূত্রে একুশের অন্ত:হীন প্রেষণায় এবার মহাসমারোহেই শুরু হয়েছে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি ও দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গৌরবদীপ্ত ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ এবং পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত সকলের উদ্দেশ্যে দরবার নিবেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’র ৩৬ তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দেন। অধিনায়ক সম্মেলনে অংশ নেন ৪৭ জন অধিনায়ক। শুরুতে ফোর্সেস গোলের রূপরেখা বাস্তবায়নে অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সেনাপ্রধান। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মত্যাগ করা শহীদদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সেনাবাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোর্সেস গোলের রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সব রকমের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’ তিনি দেশের সেবায় প্রত্যেক সেনা সদস্যকে কাজ করতে আহ্বান জানান।

আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের সব সময় প্রস্তুত থাকা ও কমান্ড মেনে চলারও নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান। দেশমাতৃকার সেবায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।

সহজবোধ্য কথার মাধ্যমে প্রত্যেকের মনোজগৎকে ছুঁয়ে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন বলেন, ‘কমান্ডিং পজিশনে না থাকলেও সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অবশ্যই নেতৃত্বের গুণাবলী থাকতে হবে। সেনাবাহিনীতে অনেক কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু সবাই কমান্ডার হতে পারে না। অনেক অফিসারদের মধ্যে থেকে যারা অধিনায়ক হয়েছেন তারা ভাগ্যবান। তাই যারাই কমান্ডার হয়েছেন তারা অবশ্যই অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

যথাযথভাবে কমান্ড ও শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এবরিবডি ক্লিয়ার গাইডলাইনস- হাউ বেস্ট ইউ ক্যান ইনফ্লুয়েন্স ইউর আন্ডারকমান্ড, হোয়াট আর দ্যা ওয়েজ এন্ড মিনস টু ইমপ্রুভড ইউর পাওয়ার বেজেস টু মেক ইউর কমান্ড মোর ইফেক্টিভ।’ ‘শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয় পৃথিবীর সমস্ত সেনাবাহিনীতে দ্য কমান্ড অ্যাপারমেন্টস আর লিমিটেড, সো হোয়েন ইউ হেভ দিস অপরচুনিটি অব কমান্ডিং এন্ড ব্যাটালিয়ন অর এনি আউটফিট ইউ মাস্ট ফিল দেট ইউর ফরচুনেট’-যোগ করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন।

এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম ও সেনা সদর দপ্তরের অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল নজরুল ইসলামসহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ফরমেশনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি রঙবেরঙের বেলুন উড়িয়ে ও কেক কেটে উদ্বোধন করেন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের। এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, ‘নবীনরা আপনাদের কাছ থেকে অনেক উপদেশ, অনেক ভালো ভালো আইডিয়া পাবে। সেগুলোকে ধারণ করে আমরা ভবিষ্যতে যেন আরও উন্নয়ন করতে পারি সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘এই মিলনমেলা যেন আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। এই বন্ধনকে কাজে লাগিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও সেনাবাহিনীর উন্নয়নে উত্তরোত্তর কাজ করে যেতে পারি।’ সেনাপ্রধান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীন ইউনিটের নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরা স্টলগুলো পরিদর্শন করেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে পুরো আয়োজন হয়ে ওঠে বর্ণিল ও উৎসবমুখর।

কালের আলো/এমএএএমকে