ভিড়ে ঠাসা প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
প্রকাশিতঃ 7:01 pm | February 26, 2023
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
কোরবানি ছাড়া একসঙ্গে বড় বড় গরু সাধারণত রাজধানীবাসী দেখে না। গাবতলীতে নিয়মিত গরুর হাট বসলেও পরিবার নিয়ে কেউ সেখানে যেতে চায় না। কিন্তু রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার মাঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দু’দিনের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কার্যত ঠাসা ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়ে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এই সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ছিল প্রদর্শনীর শেষ দিন। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্মার্ট লাইভস্টক, স্মার্ট বাংলাদেশ।’
প্রদর্শনী মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা নানা উন্নত জাতের গরু, মহিষ, গয়াল, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, খরগোশ, কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, কবুতর ও পাখিসহ বাহারি রকমের গৃহপালিত প্রাণী প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীতে সর্বমোট ৩০০টি স্টল স্থান পায়।
এখানেই দেখা মেলে ২০ থেকে ২৫ মণ বা আরও বেশি ওজনের একেকটি ষাঁড় গরু। দূর থেকে দেখতে মনে হবে যেন হাতি! কোনোটি শংকর জাতের, কোনোটি ব্রাহমা বা হলিস্টিন। মহিষ, ঘোড়া, বিভিন্ন পাখি, পোষা প্রাণীও কী ছিল না সেখানে! এক ছাদের নিচে সবকিছু দেখতে তাই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
দর্শনার্থী জুলফিকার এসেছিলেন বাচ্চা এবং স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘বড় বড় গরু দেখে বাচ্চারা এত খুশি, ভাষায় বোঝানো যাবে না। আমরা কোরবানি এলে বিভিন্ন হাটে নিয়ে যাই, আর সারা বছর নিতে পারিনা। এখানে সুন্দর পরিবেশে দেখালাম, ভালো লাগল।’
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভিড় পাখি ও ষাড় দেখতে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীরা এসেছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে। উৎসুক দর্শনার্থীদের কেউ দেখছেন হাতির মতো দেখতে বিশালাকার গরু। আবার গরুর শরীরে আদরে হাতও বুলিয়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম থেকে শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় নিয়ে আসা একটি স্টলের দায়িত্বে থাকা শাহেদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এখানে ৯০০ কেজি ওজনের ষাঁড় রয়েছে। দাম চাচ্ছি ৩০ লাখ টাকা। বিক্রি উদ্দেশ্য নয়, কেউ কিনলে আমাদের খামারে যোগাযোগ করবে।’
প্রদর্শনীতে কুকুর-বিড়ালকে জড়িয়ে অনেককে ছবি উঠাতেও দেখা যায়। ষাঁড় গরুর ৭০টি স্টল প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে হলিস্টিন, শংকর, মিরকাদিম, শাহীওয়াল, ব্রাহমা জাতের কয়েক মণ ওজনের ষাঁড় ছিল। সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা অনেকেই দল বেঁধে প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন। তাদেরই একজন শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সাতজন দেখতে এসেছি। অনেক পাখি প্রাণী একসাথে দেখলাম। এত ভ্যারাইটিস একত্রে পাওয়ায সত্যি আমরা মুগ্ধ।’
পাখির স্টলে দেখা যায়, ক্যাংগাম চিতা, ইয়াকুত লাখা, মেন্দিয়া লাখা, হিরা লোরীসহ হরেক নাম, রং ও আকৃতির পাখি। পাখিভেদে বিভিন্ন দাম হাঁকছেন স্টলের দায়িত্বরতরা।
এ যেন রূপকথার পঙ্খিরাজ
খোলা চোখে এমন ধবধবে সাদা ঘোড়া কখনও দেখা হয়নি তরুণ রাশিদুল ইসলামের। আনন্দের আতিশয্যে মনে হলো এ যেন রূপকথার পঙ্খিরাজ! অবাক নয়নে ঘোড়া দেখতে দেখতে রাশিদুল তাঁর বন্ধুকে বলে উঠলেন- ‘এরকম সাদা ঘোড়া আলিফ লায়লায় দেখেছিলাম আমি। আজ দেখলাম বাস্তবে। সত্যিই অসাধারণ এক প্রদর্শনী।
দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে বিভিন্ন রঙের ছয়টি ঘোড়া নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে অংশ নিয়েছিলো সারা এগ্রো ফার্ম। যার স্বত্বাধিকারী আলিফ ইকবাল চৌধুরী। ছয়টি ঘোড়ার মধ্যে একটি ধবধবে সাদা, একটি অর্ধেক সাদা অর্ধেক কালো। বাকি চারটি লাল-কালো রঙের।
ঘোড়ার দেখভালের দায়িত্বরত একজন বলেন, সকাল থেকে যত মানুষ এসেছে বেশিরভাগ এই সাদা ঘোড়ার সামনে সময় দিয়েছে। ছবি তুলেছে। আমাদের এই ঘোড়টি সবার মনে ধরেছে।
ঘোড়ার পরিচর্যা করা আব্দুল নামের একজন বলেন, প্রতিটি ঘোড়াকেই যত্ন নিই, এজন্য দেখতেও সুন্দর তাগড়া দেখাচ্ছে। তবে দামের বিষয়ে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
উপস্থিত দর্শনার্থী অনেকেই ঘুরে ঘুরে ঘোড়া দেখেছিলেন। অনেকেই ছবি উঠাচ্ছিলেন। মালিবাগ থেকে আসা হাফিজুর বলেন, ‘এরকম সুন্দর ঘোড়া দেখি না আমরা। বিভিন্ন স্থানে ঘোড়াগুলো চেহারা সুন্দর লাগে না। এখানে ব্যতিক্রম সাদা ঘোড়াটি। ঘোড়ার পাশে রাখা ছিল গয়াল। অনেকেই গয়াল বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় জেনে নিচ্ছিলেন।’
কালের আলো/ডিএস/এমএম