প্রয়াসের বিশেষ শিশু-কিশোরদের ডিসপ্লেতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি
প্রকাশিতঃ 9:52 pm | February 27, 2023
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতু, রাজধানীর বুকে স্মার্ট পরিবহন মেট্রোরেল কিংবা বাংলাদেশের মহাকাশ জয়। এসবই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বহু চড়াই-উতরাই আর ঘন অন্ধকার পেরিয়ে উন্নয়ন সমৃদ্ধির মহাসোপানের দেশটি এখন বিশ্বের বিস্ময়।
বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালির নতুন ইতিহাসের নির্মাতা বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়নের সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ আর অভূতপূর্ব অগ্রগতির স্মারক নিজেদের অনন্য উপস্থাপনা আর মনোজ্ঞ ডিসপ্লেতে ফুটিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। সবার চোখের সামনেই তাঁরা তুলে এনেছে বাঙালির আবহমান ইতিহাস।
১৯৭১ সালে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মহান স্বাধীনতা আর বীরের জাতি বাঙালির চির আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বাদ মনোমুগ্ধকর ধারাবাহিক ডিসপ্লের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কচিকাঁচারা।
এক সময় যারা ছিল অবহেলিত সেই শারীরিক, বুদ্ধি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরেরা প্রয়াসের অসামান্য প্রয়াসে নিজেদের মানসিক বিকাশে অভূতপূর্ব উন্নতি যেমন সাধন করেছে তেমনি নিজেদের অনন্য উপস্থাপনায় নতুন সাজে-উপাদানে তুলে এনেছে বিজয়ের আলোকবর্তিকা।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ শিশুদের বাঙালির বীরত্বব্যঞ্জক আন্দোলন-সংগ্রামের বহুমাত্রিকতা, আত্মদানের মহৎ কীর্তির অসামান্য উপস্থাপনে রীতিমতো মুগ্ধতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াসের পৃষ্ঠপোষক সেনাপ্রধানের জীবনসঙ্গী নুরজাহান আহমেদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বিশেষ শিক্ষার্থীদের অসামান্য কৃতিত্বে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। তিনি ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের উন্নতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি একীভূত সমাজ গঠনে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। প্রয়াসের বহুমুখী কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ সকলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
২০০৬ সালের ১৮ জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ‘সেনা সহায়ক স্কুল’ নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। পরে ২০১০ সালের ২ এপ্রিল স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে প্রয়াস করা হয়। বিশেষ শিশুরা জাতীয় পরিমণ্ডলে খেলাধুলায় সাফল্য অর্জন করেছে। শিক্ষা ও আইসিটিতেও ওদের সাফল্য ঈর্ষণীয়।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, প্রয়াসের ৭টি বিশেষ শিক্ষা স্কুল (স্কুল অব অটিজম, স্কুল অব ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড, স্কুল অব ইন্টেলেকটুয়াল চ্যালেঞ্জড, স্কুল অব ডাউন সিনড্রোম, ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কুল, জুনিয়র সেকেন্ডারী স্কুল এবং বৈকালিক বিশেষ শিক্ষা স্কুল), প্রত্যয় ইনক্লুসিভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং প্রয়াসের বিশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য পেশাজীবি তৈরীর উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম প্রয়াস ইনষ্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ পাইজার’র শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে এবার দু’দিনব্যাপী একীভূত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতায় মোট ৯০ টি ইভেন্টে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার অর্জনকারী ২৭৬ জন শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে খেলাধুলার পাশাপাশি মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে এবং আকর্ষণীয় ইভেন্ট যেমন খুশি তেমন সাঁজো প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.সাইফুল আলমসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে