চালক-সহকারীকে জিম্মি করে বাসে যাত্রী উঠিয়ে ডাকাতি

প্রকাশিতঃ 6:39 pm | March 04, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

যাত্রীবেশে বাসে উঠে চালক-হেলপারকে জিম্মি করে ফেলে ডাকাতদলটি। পরে তারা নিজেরা হেলপার-সুপারভাইজার সেজে বিভিন্ন স্থান থেকে একজন একজন করে লোক তুলে মারধর করে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় আন্তঃজেলা এই ডাকাতদলটি।

শুক্রবার (৩ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর-গাবতলী ও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা ফখরুল কবির শান্ত (২৯), মো. মনির হোসেন (৩০), মো. ইমরান (২২), মো. মুজাহিদ ওরফে বাবু (২৮), মো. রাজিব ওরফে আসিফ (২১) ও মো. সানি (২৬)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসহ ৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ( ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে রিসাত পরিবহনের একটি বাস যাত্রীসহ খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে ছেড়ে সুপারভাইজার-হেলপারসহ বিকেলে গাজীপুরের শিববাড়ী পৌঁছায়। সেখান থেকে পরবর্তী ট্রিপের জন্য গাজীপুর থেকে সাভারের নবীনগর যায়। নবীনগর বাস কাউন্টারে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় বাসটি ঢাকায় এসে দারুসসালাম থানার পর্বত সিনেমা হলের ডানপাশে রাস্তার উপরে রেখে বাসের ড্রাইভার-হেলপার-সুপারভাইজার ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে বাসের পিছনের সিটে ঘুমিয়ে পড়ে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে রাত ১২:৩০টায় ৮/১০ জনের একটি ডাকাত দল গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে উল্লিখিত স্থানে কেন গাড়ি পার্কিং করেছে তার কারণ জানতে চায়। এরপর ডাকাত দলের নেতা গ্রেফতারকৃত শান্তর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা বাসের ড্রাইভার-হেলপার-সুপারভাইজারের কাছে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন চায়। তারা মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে রড-হুইলরেঞ্জ-পাইপ দিয়ে মারধর করে মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ড্রাইভার-হেলপার-সুপারভাইজারের চোখ ও হাত কাপড় দিয়ে বেঁধে তাদেরকে বাসের পিছনের সিটে ফেলে রাখে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ডাকাতদের দলনেতা গ্রেফতারকৃত শান্ত গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর এসে ডাকাত দলের অন্য সদস্য ইমরানকে গাড়ি চালাতে বলে। পরে ডাকাত দলের কয়েকজন নিজেরাই যাত্রী-হেলপার-সুপারভাইজার সেজে গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-আজিমপুর-যাত্রাবাড়ী-কাচপুর হয়ে একই পথে এসে আমিনবাজার-সাভার-চন্দ্রা’র বিভিন্ন স্থান থেকে একজন একজন করে লোক তুলে মারধর করে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদের চোখ ও হাত বেঁধে বাসের পিছনে ফেলে রাখে। ডাকাতদল সারারাত ধরে ডাকাতি করে ভোর ৬:৩০-৭:০০টার দিকে আহত যাত্রীসহ বাসটি সাভার থানার কবিরপুরে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় ডিএমপির দারুসসালাম থানায় মামলা রুজু হয়।

তিনি আরো বলেন, মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলটি শনাক্ত করা হয়। গতকাল শুক্রবার (৩ মার্চ ২০২৩) রাজধানীর মিরপুর-গাবতলী, সাভারের গেন্ডা-রাজপুরে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সাথে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজসে বাস ছিনতাই করে বাসের ড্রাইভার-হেলপার-সুপারভাইজারকে জিম্মি করে বাসের মধ্যে ডাকাতি করে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের দারুসসালাম থানায় রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব রিফাত রহমান শামীম পিপিএম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এস. এম. রেজাউল হকের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।

কালের আলো/এসবি/এমএম