১০৩ টি প্রকল্পের উদ্বোধন কী ধ্বংসের নমুনা?, ময়মনসিংহের জনসমুদ্রে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 6:05 pm | March 11, 2023
কালের আলো রিপোর্ট :
ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বাস্তব চিত্র ময়মনসিংহবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি কোন কিছুই ভালো লাগে না রোগে আক্রান্ত বিএনপি’র কঠোর সমালোচনাও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির কোনো এক নেতা সারাদিন মাইক লাগায়ে বসে থাকে। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। আচ্ছা ময়মনসিংহবাসী আপনারাই বলুন, আমরা কি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি?
বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়াই, আর বিএনপি কমায়। বিএনপির আমলে দুর্নীতিবাজরা বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। এখন বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। তাই আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। আমরা চাই, সব ঘর আলোকিত হোক। বিদ্যুৎ না হলে এত কথা মাইকে আসতো কীভাবে। আমি ময়মনসিংহবাসী আপনাদের কাছে জিজ্ঞেস করি, এ যে আমরা ৭৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং সব মিলিয়ে ১০৩টি প্রকল্প, এগুলো কী ধ্বংসের নমুনা? ওরা এত মিথ্যা কথা বলে কেন? আসলে মিথ্যা কথা বলা ওদের বেসাতি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নাকি কিছুই পারিনি। আজকে যে বাংলাদেশটা ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদলেতে তো এখন দূরে বসেও দেশের মানুষ কথা বলে, রাজনীতিও করে, সবই করে।’
আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের অঙ্গীকার ও দীপু মনির আশাবাদ
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তথাকথিত বিরোধী দল মিথ্যা বলে বলে স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়। কিন্তু এই স্বাধীনতা আমরা লাখো শহীদের রক্তে পেয়েছি। এই স্বাধীনতা কোন মতে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না। দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের যারা তথাকথিত বিরোধী দল আছে, মিথ্যা বলে বলে এ স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়। তারা তা পারবে না।’
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আমাদের গ্রাম, কৃষি সবকিছু হবে স্মার্ট। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন করা। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে আরও উন্নত করবো, এজন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করেছিলাম আমরা। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।’
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ‘জনসমুদ্র’ নয় ‘মহাসমুদ্র’; টিম ওয়ার্কে সফল জেলা ও মহানগর আ.লীগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নাকি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি শুধু অঙ্ক আর উর্দুতে পাস করেছেন। উর্দু পাকিস্তানের ভাষা- এটা তার খুব প্রিয় ভাষা। আর অঙ্কতো টাকা গোণা লাগে- ওই দুইটাতেই পাস করেছেন আর কোনটাতে পাস করতে পারেনি। জিয়াউর রহমান ছিল মেট্রিক পাস। তাদের ছেলে একবার এই স্কুল ওই স্কুল শেষ কী পাস করেছে কেউ জানে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম ৮১ সালে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে। আমি জানতাম না কোথায় আমি থাকবো, কীভাবে চলবো কোনো চিন্তা করিনি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা জনসভা মঞ্চ আলোকিত করে আরও বলেন, ‘শুধু একটা চিন্তা করেছি এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে। এদেশের মানুষকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে। গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুফলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি বলেই তো আজকে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। আর যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম, বিদ্যুৎ না বাড়াতাম, তাহলে এত কথা মাইকে আসতো কীভাবে। তো আমরা যে কিছুই করিনি, আমাদেরই করা জিনিস ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের স্বভাব। লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি এটাই তাদের স্বভাব।’
হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এ মর্যাদা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি আগামীতে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভাগ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নকাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জনসভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ১০৩টি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও প্রায় দুই হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম।
জনসভায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অসিম কুমার উকিল, মারফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মফিদুল হক খান দুলাল, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু।
যৌথভাবে জনসভা সঞ্চালনা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত।
কালের আলো/একে/এমএএএমকে