প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়ন, এসবিতে ডে-কেয়ার সেন্টারের যাত্রা
প্রকাশিতঃ 10:02 pm | April 11, 2023
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
সরকারি-বেসরকারি অফিসে ডে কেয়ার সেন্টার করার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। কেবল বাবা-মায়ের স্বস্তি দিতে নয়, একসঙ্গে অনেক শিশুর বেড়ে ওঠা তাদের সামাজিকীকরণের জন্যও জরুরি। এসব বিষয় মাথায় রেখে কর্মজীবী মায়েদের নিশ্চিন্তে কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ভবনে যাত্রা শুরু হলো ডে-কেয়ার সেন্টারের।
রাজধানীর মালিবাগে স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান কার্যালয়ের মাল্টিপারপাস হলে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল)
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাডিশনাল আইজিপি (গ্রেড-১) মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
জানা যায়, সব শিশুই যেন বাইরের জগতের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, অন্য শিশুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার মানসিকতা যাতে তৈরি হয়, সে জন্যও দিবাযত্ন কেন্দ্র ছিল অপরিহার্য। এসবির এ দিবাযত্ন কেন্দ্র শিশুদের সম্পূর্ণ মাতৃস্নেহে লালন–পালন করা হবে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদন, সুষম খাবার ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালে কর্মস্থলে নারীর অংশগ্রহণ ৫০:৫০ এ উন্নীত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নেও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী
রাজধানীর মালিবাগে স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান কার্যালয়ের মাল্টিপারপাস হলে এ ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘ডে-কেয়ার সেন্টার কর্মজীবী মায়েদের নিশ্চিন্তে কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করছে। আজ এখানে অনেক মা উপস্থিত আছেন। এই মায়েদের উপস্থিতিই প্রমাণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু্যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মপরিকল্পনায় গত দেড় দশকে এদেশের নারীদের-মায়েদের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ কর্মসংস্থান শুধু ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেটসহ বিভাগীয় শহরে নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নারীদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যৌথ পরিবার প্রথা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং একক পরিবারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক মা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মে যোগ দেয় না। ভাল মানের ডে-কেয়ার সেন্টার হলে তাঁরা চাকুরিতে যোগ দিবে। তার শিশুর জন্য মানসম্মত উপযুক্ত স্থানে নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার লক্ষ্যে শিশুর দিবাকালীন অবস্থানের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এসকল বাস্তবতা বিবেচনা করে কর্মজীবী মায়েদের নিশ্চিন্তে কাজে যাওয়া এবং শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২১’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে।’
সরকার শিশুদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, ‘সরকার শিশুদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল। তাদের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন। স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিশুদের যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করা। তাদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সহজ হবে।’
আইজিপি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের সুবিধা রেখে সরকারি ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ভবনে দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
শিশুর উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নারী-পুরুষ উভয়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অফিস ও কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টারের সুধিধা থাকলে নারীরা নিশ্চিন্তে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘শিশুর সঠিক বিকাশ ও শিশুর উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়।’
স্বাগত বক্তব্য দেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি আমেনা বেগম। প্রকল্প পরিচালক শবনম মোস্তারী ডে-কেয়ার সেন্টারটির বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরেন। অভিভাবকদের পক্ষে বক্তৃতা করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা আমাতুল্লা। এ সময় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন এবং অতিরিক্ত সচিব রওশন আরা বেগমসহ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে