দুর্গম পাহাড়ে সৈনিকদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের ‘তৃতীয় ঈদ’, চাঙ্গা ও উর্ধ্বমুখী আত্মবিশ্বাস

প্রকাশিতঃ 10:08 pm | April 22, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম সেনাপ্রধান। যিনি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে দায়িত্বরত সেনা সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে ঈদের দিন দুর্গম পাহাড়ি আর্মি ক্যাম্প পরিদর্শনের বিরল উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিজ বাহিনীকে তিনি দেখেন একটি পরিবার হিসেবেই। এই পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বভাবতই সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন সৈনিকরা।

দুর্গম পাহাড়ে মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় ধ্রুব সত্য জেনেও এসব সৈনিকদের চোখজোড়া স্বপ্ন আর বুকে দৃঢ় প্রত্যয়। তাঁরা যোদ্ধা এবং শান্তির প্রবক্তা। সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারলেও তাদের ঈদের দিন পার হয় দিন-রাত কাজের মধ্য দিয়েই। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নাড়ির টানে ঈদ উৎসবে বাড়ি ফেরা হয় না। ঈদ কাটে কর্মস্থলে। তাদের কাছে এ উৎসব অন্য দশটা দিনের মতোই। দায়িত্বশীল একেকজন সেনা সদস্য ছড়িয়ে দেন নিজের কর্মের দ্যুতি।

শান্তি-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা এসব সৈনিকদের সঙ্গে আবারও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে প্রচলিত চিত্রই পাল্টে দিয়ে নতুন এক দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি কথাও বলেছেন একজন অভিভাবকের মতোই।

ঈদের সকালে খাওয়া হয়েছে কীনা, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বা কোন রকমের অসুবিধা রয়েছে কীনা-সবকিছুই তিনি জেনেছেন যেন পরম নির্ভরতার প্রতীক হয়েই। প্রিয়জনের সান্নিধ্য বঞ্চিত হলেও সৈনিকদের মনের দু:খবোধ মুহুর্তেই উবে যায় তাদের দুয়ারে সেনাপ্রধানের সরাসরি উপস্থিতিতে। খুশির বারতার দিনটিতে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র অভিভাবকত্ব দুর্গম পাহাড়ে নিজ বাহিনীর সৈনিকদের মনোবল চাঙ্গা ও আত্মবিশ্বাসের পারদকে করেছে উর্ধ্বমুখী। নিজ বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ‘সরাসরি সংযোগ’ মাঠের সৈনিকদের মননে স্নেহময় সুনিবিড় ছায়ার মতোন রেখাপাত করছে যেন!

এসব ঘটনাপ্রবাহ শনিবারের (২২ এপ্রিল)। কাজের মধ্যেই ঈদ আনন্দ খুঁজে পাওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় মোতায়েনরত সেনাসদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়ের উদ্দেশ্যে বামে লংগদু আর্মি ক্যাম্প এবং রাঙামাটি রিজিয়ন সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন। দু’ক্যাম্পেই রোপণ করেন গাছের চারা।

শুধু তাই নয়, সেনাপ্রধানের আপত্য স্নেহ-মমতার চিরন্তন বন্ধন স্মরণ করিয়ে দিলো যারা পরিবারের ভেতর সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে ‘অভিভাবক’ হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিকতার নান্দনিক বৈভাষিক রূপে অনুভবনীয় মহিমায় তাদের সামগ্রিক খোঁজ খবর নেওয়া। ঈদের প্রকৃত আনন্দ ভাগাভাগি করা। নব প্রাণের সলতে জ্বালিয়ে নির্মল আনন্দের ফোঁয়ারায় মুহুর্তেই সেনাপ্রধান ভুলিয়ে দেন স্বজন থেকে দূরে থাকার ওদের সব কষ্ট।

সেনাপ্রধান স্থানীয় জনসাধারণের হাতে হাতে তুলে দেন ঈদ উপহারও। নিখাদ আনন্দঘন এমন মুহুর্তে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত সেনা সদস্যরাও। তৃণমূলের সৈনিকদের মনোবল বৃদ্ধিতে বাহিনীর সর্বোচ্চ ব্যক্তির সান্নিধ্য দায়িত্ব পালনে তাদের যেন আরও আন্তরিক ও উৎসাহিত করে তুলেছে।

এ সময় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা; বামে লংগদু আর্মি ক্যাম্প ও রাঙামাটি রিজিয়ন সদর দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা; জেসিও; অন্যান্য পদবীর সৈনিরা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী প্রধান রাঙামাটি রিজিয়ন সদর দপ্তরের সকল স্তরের সেনাসদস্যদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন।

জানা যায়, সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন এর আগে ২০২১ সালের বুধবার (২১ জুলাই) পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই সেনা ক্যাম্প পরিদর্শনের মাধ্যমে সৈনিকদের সঙ্গে নিজের প্রথম ঈদ উদযাপন করেছিলেন। গত বছরের রোববার (১০ জুলাই) ফের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে তিনি আনন্দময় করে তুলেন তাদের ঈদও।

দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কমান্ড নিযুক্তিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ফলত পার্বত্য অঞ্চলে সেনাদের প্রতিটি ক্ষণের কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের এই ১৭ তম সেনাপ্রধানের।

পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার কথা তিনি জানান সৈনিকদেরও। ঈদের পবিত্র দিনে সৈনিকদের পাশে এসে দাঁড়াতে পেরে তিনি নিজেও খুব আনন্দিত। বাহিনী প্রধানের সদর্প উপস্থিতি লড়াকু সেনারা আরও উজ্জীবিত এবং বলীয়ান হয়েছেন দ্বিগুণ প্রাণশক্তিতে।

নিজের দিকনির্দেশনা ও উদ্দীপনামূলক বক্তব্যে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের ভেতরে স্বপ্ন দেখা ও সফল করার স্পৃহাও জুগিয়েছেন সেনাপ্রধান। কালের আয়নায় দেদীপ্যমান করেছেন নিজের দায়িত্ববোধকে।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকাসহ সকল সেনানিবাসে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদ-উল-ফিতর পালিত হয়। সকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় শেষে সেনাবাহিনীর সকল স্তরের কর্মকর্তা, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সৈনিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে