বঙ্গবন্ধুর মঞ্চে শিহরিত প্রতিমন্ত্রী এনামুর, কন্ঠে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে দ্যুতিময় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব

প্রকাশিতঃ 6:50 pm | May 19, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

শিরদাঁড়া সোজা করে বিশ্বমঞ্চে কথা বলেছেন অনেকবার। দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বহুমাত্রিক পদক্ষেপকে তুলে ধরেছেন। নিরাপদ বাংলাদেশ উপহারে নিজেদের কর্মযজ্ঞের বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন বারবার। কিন্তু সব ছাপিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান এমপি’র জন্য বৃহস্পতিবারের (১৮ মে) সকাল ছিল অন্যরকম। ঠিক যেন অপেক্ষার দাঁড়ি টানার সকাল।

আর হবেই বা না কেন? জাতিসংঘ সদরদপ্তরে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। জাতিসংঘের এই মঞ্চে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলায় ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাবার পথ অনুসরণ করে একাধিকবার এই জাতিসংঘেই বাঙালি জাতির স্বাপ্নিক নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের সামনে সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত বার্তা ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফররত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানও এবার সেই মঞ্চেই বাংলাদেশের প্রধান কন্ঠস্বর। স্বভাবতই প্রাণের উচ্ছ্বাসে প্রতীক্ষার ক্ষণ পেরিয়ে আসার কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণে স্বপ্নছোঁয়া আনন্দে শিহরিত ডা: এনামুর নিজেও।

নিজের ফেসবুক ওয়ালে এক পোস্টে সেই উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মহান আল্লাহ তা’লার কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাষণ দিয়েছিলেন এবং তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বার বার যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছেন, আজ জাতিসংঘের সেই মঞ্চে আমার বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ হয়েছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদরদপ্তরে দু’দিনব্যাপী দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সম্পর্কিত এক উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠক গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) থেকে শুরু হয়েছে। এই বৈঠকটি আগামী শুক্রবার (১৯ মে) শেষ হবে। এই বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান ৫ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, এই বৈঠকে নিজের বক্তব্যে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান এমপি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই তুলে ধরেছেন। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিনিয়োগকে তিনি ব্যয় হিসেবে মনে করেন না। পাশাপাশি এই বৈশ্বিক মঞ্চে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত প্রতিশ্রুতি উপস্থাপন করেন।

দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় সাম্য, মৈত্রী ও সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের এই বৈশ্বিক মঞ্চে শাশ্বত সুন্দর নীতিতেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে উদ্ভাসিত করেন প্রতিমন্ত্রী। কর্ম, কৃতিত্ব, বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল এই ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী দুর্যোগ সহনীয় জাতি গঠনে অন্তরতর গভীর সত্যের মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতাকে দেদীপ্যমান করেন। দ্যুতিময় করেন অন্তরঙ্গ অনুভবের শাব্দিক প্রকাশে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাস্তবতা, প্রতিবেশ ও সময়মুখর শব্দগুচ্ছে দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তসহ নানামুখী প্রয়াসকে বিশ্ব পরিমন্ডলে যৌক্তিক আখরে অবিচ্ছেদী নির্মোহ কন্ঠে উপজীব্য করে তুলতেও মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) জাতিসংঘের সদরদপ্তরে এই সাধারণ সভার প্রথম দিনে প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে বিশ্বে বাংলাদেশের রোল মডেল হয়ে উঠা এবং গত ৭ বছর জাতীয় বাজেটের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস খাতে সরকারের বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কৌশলটি দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জাতীয় বাজেটের প্রায় ৯ থেকে ১১% দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বরাদ্দ করা হয়।’

করোনা মহামারির ভেতর বাংলাদেশ ২০২০ সালে পাঁচবার বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের মতো দুর্যোগ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০৭ সালে যেখানে মৃত্যুর হার ছিল ৩.১০ সেখানে ২০২০ সালে সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ০.২০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। দুর্যোগে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এবং বাসস্থানের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।’

কালের আলো/এমএএএমকে