রাজধানীতে হালনাগাদ হচ্ছে বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা

প্রকাশিতঃ 10:15 pm | May 30, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

বৈধ অস্ত্রধারীদের দিকে নজর বাড়াচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নিজ নিজ এলাকায় বৈধ অস্ত্রের তদারকি করতে ৮টি ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনারদের (ডিসি) জোরালো নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। রাজধানীর পুলিশপ্রধানের নির্দেশনার পরপরই হালনাগাদ করা হচ্ছে বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা। শুধু তাই নয়, অস্ত্র ও গুলি কার কাছে কোথায় বিক্রি হচ্ছে এসব বিষয়সমূহও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিএমপির এই শক্ত অবস্থান বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের রাশ টেনে ধরবে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘যারা বৈধ অস্ত্রধারী এবং যাদের কাছে গুলি রয়েছে তাদের তালিকা হালনাগাদ করা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। এর পেছনে বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য নেই।’

জানা যায়, বছরের পর বছর লাইসেন্সের বিপরীতে বৈধ অস্ত্রধারীরা গুলি সংগ্রহ করলেও গুলি খরচ করার পর থানায় জানানোর যে নিয়ম, তার তোয়াক্কা করেন না। ফলে বৈধ অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার কারণ আর হিসাব কোনোটাই জানতে পারছে না সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আশঙ্কা করা হয়, এই ফাঁকতালে ‘ব্যাপক হারে’ বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। বৈধ অস্ত্র নিয়ে কোনো ফাঁকফোকর’র বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ফলে এই বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

ডিএমপির ক্রাইম কনফারেন্সেও বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বৈধ অস্ত্র দিয়ে কোনও অবৈধ কর্মকাণ্ড করতে না পারে, সেজন্য আগে থেকেই অস্ত্র ও গুলির হিসাব ও অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ অনুযায়ী, গুলি সংগ্রহের বাৎসরিক সীমা বা পরিমাণ লাইসেন্সে নির্ধারিত করা থাকবে। গুলি ক্রয় বা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে, তবে তার আগে সংশ্লিষ্ট থানা এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গুলি খরচ করার হিসাব দিতে হবে।

ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অস্ত্র ও গুলি আমদানি এবং কী কী অস্ত্র থাকার কথা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসিদেরকে ইনভয়েসের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখতে হবে। কার কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি আমদানি করা হয় এবং কার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, সেসব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। জেলা প্রশাসন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে এবং যেসব বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারী ব্যবহারকারীরা ডিএমপির বিভিন্ন থানায় জিডির মাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন, তা যাচাই-বাছাই করে ডিএমপিতে কত সংখ্যক বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারী অস্ত্র ও গুলি আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করে জেসি (যুগ্ম কমিশনার) ক্রাইম বরাবর প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, এই পর্যন্ত ডিএমপিতে কতগুলো অস্ত্রের লাইন্সে দেওয়া হয়েছে, তার সংখ্যার বিষয়ে ক্রাইম বিভাগের সব ডিসি তালিকা প্রস্তুত করবেন। ঢাকার বাইরে জেলা পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে কতগুলো বৈধ লাইসেন্সধারী অস্ত্র ডিএমপি এলাকায় আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া গান চেকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রদত্ত ছক অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্বলিত রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে তার অস্ত্র-গুলি ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে কিনা, তা থানাগুলোর ওসিরা (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) যাচাই- বাছাই করবেন।

ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই বৈধ অস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র বা অনুমোদনহীন অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গত বছরের শুরুতে ঢাকায় আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় গুলি সরবরাহ করেছিলেন একজন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। পুরানা পল্টনের আর্মস মিউজিয়াম নামে একটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক ইমরান হোসেন জিতু ওই জোড়া খুনে ব্যবহৃত গুলি সরবরাহ করেছিলেন। ওই মামলায় জিতু গ্রেফতার হয়ে এখনও কারাবন্দি রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা অনেক বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় গুলি কিনেছেন। বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার আড়ালে অবৈধ গুলি সংগ্রহ করে বিক্রি করেন।

কারা বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন?
অস্ত্র নীতিমালা অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিকভাবে সমর্থ ৩০ থেকে ৭০ বছরের ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেয়া হয়। আবেদনকারীকে আগের তিন বছর পিস্তল বা রিভলবার অথবা রাইফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩ লাখ এবং শর্টগানের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। একজন দুটির বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন না।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শর্টগান ও এনপিবি রাইফেলের লাইসেন্স দিতে পারবেন। তবে পিস্তল ও রিভলবারের ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনকারীকে লাইসেন্স দেয়া যায় এমন সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় অনাপত্তি দিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেটি ইস্যু করবেন।

কালের আলো/এমকে/এআর