অনন্য সামরিক সম্প্রীতি; বিএমএ’কে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্বীকৃতি ভারতের সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:28 pm | June 06, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ভারতের চেন্নাই এ অবস্থিত অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমিতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ ও মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সময়টি চলতি বছরের শনিবার (২৯ এপ্রিল)। এক মাস ৯ দিনের মাথায় মঙ্গলবার (০৬ জুন) চট্টগ্রামের বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করলেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে।
অবশ্য এটিই প্রথম নয় ২০১৫ সালের ১৬ জুন বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে সালাম নিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিং সুহাগ। ২০২২ সালের ৮ জুন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও প্যারেড অভিবাদন গ্রহণ করেন কাতার সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পাইলট) সালেম হামাদ আল-আকীল আল-নাবেত। এসবই যেন সামরিক বাহিনীর সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি’র (বিএমএ) ৮৪তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের কমিশন প্রাপ্তিতে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে মঙ্গলবার (০৬ জুন) সালাম গ্রহণ করে নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ মনে করেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে। তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। নবীন সেনা সদস্যদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী ধরণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোতে হবে সেই বিষয়ে নবীন ক্যাডেটদের নানা পরামর্শ দেন। তাঁর কন্ঠে উচ্চারিত হয়-‘আই ওয়াজ এক্সট্রিমলি প্লিজড টু ওয়াচ এন্ড রিভিউ দ্য প্যারেড টুডে।’

বাদক দলের তূর্য নিনাদের ধ্বনিতে সুসজ্জিত অশ্বারোহী শোভাযাত্রা নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে চট্টগ্রামের বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট তাকে বরণ করে নেন। এরপর ভারতীয় সেনাপ্রধান নবীন অফিসারদের ক্যাডেট পরিদর্শনের পাশাপাশি কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। স্মারক তুলে দেন পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের।
৮৪ তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে দু’জন বিদেশী এবং ১৪৬ জন বাংলাদেশী ক্যাডেট কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী ক্যাডেট কমিশন পেয়েছেন ২৩ জন। বিদেশী ক্যাডেটদের মধ্যে একজন তানজানিয়ার ও একজন দক্ষিণ সুদানের নাগরিক। নবীন অফিসাররা সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানান।

বেগবান করতে চান দুই দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বেগবান করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধন আছে। আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি ছাড়াও অন্য অনেক বিষয়ে মিল আছে। আর যদি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা বলতে হয় দুই দেশের একে অপরের সঙ্গে সার্বিক সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে তা প্রতিফলিত হয়। এটা সঠিক পথ ধরেই এগাচ্ছে, আর এ সম্পর্কের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। সামরিক সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। আর সামরিক সহযোগিতার জন্য আমরা তিন চারটি বিষয়ে বিশেষ জোর দিচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রথমটি অবশ্যই দুই দেশের সেনাদের যৌথ প্রশিক্ষণ। যাতে তারা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন। তারপর রয়েছে দুই দেশের মধ্যে যৌথ মহড়া। আমরা দুই দেশের সেনা সদস্যদের যৌথ মহড়ার আয়োজন করে থাকি যাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। এই পরিদর্শনের মতো আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রায়ই পরিদর্শন করে থাকি। এছাড়া আমরা সাংস্কৃতিক পরিদর্শনও করে থাকি থাকি যাতে দুই দেশের সেনা সদস্যদের পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। আর সবশেষে দুই দেশের যৌথ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি ও উৎপাদনে অনেক ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে এটি একটি সম্ভাবনাময় দিক।’

বিএমএ’কে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি
নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ মনে করেন ভারতের সেনাপ্রধান। জেনারেল মনোজ পান্ডে বলেন, ‘বিএমএ’র কমান্ড্যান্ট আমাকে ব্রিফ করেছেন। তিনি আমাকে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখিয়েছেন। আমি সব দেখে বলতে চাই এটি একটি বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষণগত দিক দিয়ে বলতে চাই, আমাদের মনে হয় পেশাগত সামরিক শিক্ষা নেতৃত্বের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একাডেমিকের একটি ভালো সামঞ্জস্য রয়েছে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নয়ন সাধনের জন্য অনেক নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে আমার মনে হয় সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামো, প্রশাসন আর এলাকা সব মিলিয়েই মিলিটারি একাডেমির জন্য বিএমএ উপযুক্ত।’
সেরা চৌকস অফিসার ক্যাডেট শেখ সাব্বির, তপুর সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক অর্জন
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার শেখ সাব্বির আহমেদ ৮৪তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের সেরা চৌকস অফিসার ক্যাডেট বিবেচিত হন ও অসামান্য গৌরবমন্ডিত ‘সোর্ড অব অনার’ এবং কোম্পানী সার্জেন্ট মেজর মোহাম্মদ তানভীর রহমান তপু সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন। অফিসার ক্যাডেট এমারটন জন কম্বো (তানজানিয়া) শ্রেষ্ঠ বিদেশি অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি ট্রফি’ অর্জন করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে