রপ্তানিতে চাঙ্গা আম অর্থনীতি

প্রকাশিতঃ 11:16 pm | June 10, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

ক্রমশ বড় হচ্ছে দেশের আম অর্থনীতি। আম উৎপাদনে আধিপত্য ধরে রেখেছে কয়েকটি জেলা। প্রতি বছরই বাড়ছে আবাদ ও উৎপাদন। আধুনিকায়ন করা হয়েছে বাগান ব্যবস্থাপনাও। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এবার বিশ্বের ২৮ দেশে রপ্তানি হচ্ছে আম। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে আম রপ্তানি। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাজার। এসব দেশে যাচ্ছে গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা জাতের আম। চলতি অর্থবছর গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার প্রায় শত কোটি টাকার আম রপ্তানির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে এখন প্রতিটি বাড়িতে মানসম্মত আম উৎপাদন হচ্ছে। আমের বাজার অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। আমাদের চাহিদাপূরণ করে এখন বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ এখন কিভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আম রপ্তানিও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ২১ লাখ ৪৩ টন। সেই বছর রপ্তানি হয় ৩০৯ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন ২৩ লাখ ৭২ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৩২ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ২৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ৩১০ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৬৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৮৩ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ লাখ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৩২ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭৫৭ টন। তবে এবার সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফল ও সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে গত ২৫ মে থেকে চলতি অর্থবছরের আম রপ্তানি শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফল ও সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। চলতি বছরে চার হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের। আশা করছি এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’

আম যাচ্ছে ২৮ দেশে
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল মেয়াদের প্রকল্পটি ১৫ জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আম উৎপাদন প্রদর্শনী, রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান আমবাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা কাজ করা হয়েছে। এই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাই জানিয়েছেন, ২৮ দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানির কথা। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন ও বেলজিয়াম। তবে সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যে। ঠিক পরের অবস্থানেই রয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

১৪ টি দেশে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ৫’শ মেট্রিক টন আম
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান কালের আলোকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে ১৪ টি দেশে প্রায় সাড়ে ৫’শ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত চলবে রপ্তানি কার্যক্রম।’

তিনি বলেন, ‘এই বছরই প্রথম সুইজারল্যান্ডের একটি চেইন শপে বাংলাদেশের আম পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমেই মূলত বাংলাদেশের আম মূলধারার সুপার মার্কেটে ঢুকেছে। তাদের কাছ থেকে ভালো রিপোর্ট পেলে আমরা ইউরোপের বড় মার্কেট ধরতে পারব। আর এই রেফারেন্সে আরও নতুন দেশে আমাদের আম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ২৯,৪২৯ ডলারের ফ্রেশ এন্ড ড্রায়েড ম্যাংগো রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২,৩৬,০২৭ ইউএস ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০০১৯ ইউএস ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৯৬ ইউএস ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬৬৩ ইউএস ডলারের আম রপ্তানি হয়।

চলতি বছরের রোববার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন ও অবহিতকরণ কর্মশালায় কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেছিলেন, ‘একসময় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ছিলো অতিমারি, দারিদ্রতা ও দূর্ভিক্ষের দেশ। কিন্তু গত ১৫ বছরে এই চেহারা বদলে গেছে। দেশে ২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হলেও মাত্র ১৬০০ টন রপ্তানি হয়। দেশের মানুষের চাহিদাপূরণ করতে হয় একারণে রপ্তানি কম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো, অনেক আম নষ্ট হয়। বিদেশে আম পাঠাতে হলে আম দেখতে যেমন সুন্দর হতে হবে তেমনি আমের বাইরের অংশ জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে।’ মূলত কৃষি মন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশে আম রপ্তানিতে সর্বোচ্চ নজর দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যার ফলশ্রুতিতে আম রপ্তানিতে বইতে শুরু করেছে সুবাতাস।

কালের আলো/এমএএএমকে