সংসদে স্বপ্নদর্শী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সালাম মূর্শেদীর কবিতায় সংসদ সদস্যদের উচ্ছ্বাস
প্রকাশিতঃ 3:57 am | June 14, 2023
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
তিনি কবি বা সাহিত্যিক নন। দেশবরেণ্য কৃতি ফুটবলার থেকে শীর্ষ ব্যবসায়ী। এখন আপাদমস্তক মাঠের নেতা। খুলনা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত টানা দু’বারের সংসদ সদস্য। একই সঙ্গে সংস্কৃতিপ্রাণ এক ব্যক্তিত্ব আব্দুস সালাম মূর্শেদী। নেতৃত্ব ও মাবিকতায় বিশ্ব পরিমণ্ডলে সাহসী আর আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় সমৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার মাইলফলক দেশ স্পর্শ করায় মহান মুক্তিযুদ্ধের অদম্য প্রেরণায়, প্রিয়নেত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজের দীর্ঘ বক্তব্যের দাঁড়ি টেনেছেন ‘লৌহ মানবী শেখ হাসিনা’ নামে কবিতায়। ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী শেখ হাসিনার বাঙালি জাতির আলোর দিশারী হওয়ার ইতিহাস, বিজয়ের পাঁচ দশক পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতির মাধ্যমে বদলে দেওয়া, দেশের জন্য বয়ে আনা গৌরব ও সাফল্য সবকিছুই ঠাঁই করে নেয় সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদীর অমর কবিতায়।
একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় বাঙালি জাতির কাণ্ডারি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কারিগর শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতার আসন অলংকৃত করেছেন নিজের মেধায়-প্রজ্ঞায়, গণমানুষের ভালোবাসায় আর বিশ্বাসে। আর তাই কীনা খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বলে চলেন-‘হে লৌহ মানবী শেখ হাসিনা/দেখেছি মোরা তোমার রাজ্য পরিচালনা/অপূর্ব এক ধরণ/ অন্যায়কে পরিহার করে/সত্যকে করেছো বরণ/স্মার্ট একটি বাংলাদেশ হবে বলেছিলে তুমি/তাই তো মোরা স্বপ্ন দেখি/বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ হবে আমাদের জন্মভূমি/বীর পিতার হে বীর কন্যা/তোমার একের পর এক উন্নয়ন পরিক্রমা/কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি পারবেও না/গড়ছো ডিজিটাল বাংলাদেশ/২০৪১ সালের মধ্যে হবে/ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ স্মার্ট অর্থনীতির বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ।’ অনেক সংসদ সদস্য এ সময় টেবিল চাপড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
প্রায় এক বছর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে গান ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়েছিল জাতীয় সংসদে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও ফোক শিল্পী মমতাজ বেগম প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে একটি গান পরিবেশন করেন। তার আগে কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন আরেক সংসদ সদস্য ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।
জনবান্ধব বাজেটের রূপকার প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন
নিজের বক্তব্যের শুরুতে সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদী জনবান্ধব বাজেটের রূপকার প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলার বিনির্মাণে তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে নিরলস পরিশ্রম করে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও বিশ্বের উন্নয়ন প্রত্যাশী দেশসমূহের জন্য বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এসব বিষয় সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, অত্যন্ত সাহসী জনবান্ধব কর্ম পরিকল্পনা সামনে নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী গত পহেলা জুন উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে এই শিরোনামের সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই যাবতকালের সর্ববৃহৎ বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।
‘এছাড়াও কোভিড পরবর্তী এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিবেচনা রেখে দেশের সর্বস্তরের জনগণের কথা ভেবে বাস্তবভিত্তিক, সময়োপযোগী জনবান্ধব বাজেট পেশ করার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাই এবং এর মূল রূপকার আমাদের সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানাই’-যোগ করেন এই সংসদ সদস্য।
বিএনপিকে তোপ দেগেছেন
বক্তব্যের বিভিন্ন অংশে বিএনপিকে তোপ দেগেছেন আব্দুস সালাম মূর্শেদী। বলছিলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই এই বাজেট নিয়ে টেলিভিশনে আলোচনা দেখি। আমাদের কিছু নামধারী সুশীল বাবুরা, বিএনপির সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা এবং কিছু বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন টেলিভিশনে আলোচনা করেন যে এই তিন টার্মে যে বাজেট হয়েছে সেটি কোনভাবেই সঠিক বাজেট হয় নাই। যদি বাজেট সঠিক না হতো তাহলে আমাদের এই বড় বড় উন্নয়নের মেগা প্রজেক্টগুলো কিভাবে হলো? আসলেই ১৫ বছরের তাদের বক্তব্যগুলো যদি একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তাহলে শব্দচয়ন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা নিজেরা বিচার-বিশ্লেষণে অক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘এই ১৪ বছরের আমাদের কোন উন্নয়ন থেমে থাকেনি। আমাদের ১৫ টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। তার মধ্যে পদ্মা সেতু অলরেডি কাজ শেষ হয়ে গেছে। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়িসহ সব মেগা প্রজেক্ট জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে কাজ চলমান রয়েছে। বিএনপি আমাদের সরকারের উন্নয়নগুলো চোখে দেখে না। সমাজের ছিন্নমূল মানুষের আশ্রয়ের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩৫ লাখ মানুষকে ঠিকানা দিয়েছেন।
বিএনপি ধর্ম বাণিজ্যের কড়া সমালোচনা করে আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘বিএনপি বলতো যদি আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকে তাহলে দেশে আজান হবে না, উলু বাজবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ উপজেলায় এবং জেলায় নির্মাণ করেছেন। যার দ্বিতীয় তৃতীয় পর্যায়ে উদ্বোধন হয়ে গেছে। সব উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ চলছে।’
তিন বছরের জন্য ৫০ পয়সা চান সোর্স ট্যাক্স
বাজেট বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্প ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প অর্থাৎ পোশাক এবং বস্ত্র খাত প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। আমরা জানি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আমাদের প্রাথমিক কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের ইউটিলিটি বিলগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ এবং প্রতিযোগী দেশের সাথে সমন্বয় করে যেগুলো বেড়েছে। ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা কিন্তু আমাদের প্রাইস বাড়ায় নাই। আমি মনে করি, এই রপ্তানি খাত ও পোশাক-বস্ত্র খাতের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওয়াকিবহাল।’
‘আমাদের শিল্পের অবদান যেখানে এক কোটি মানুষের কাজ করা প্রত্যক্ষভাবে পরোক্ষভাবে ৫ কোটি মানুষের জীবন জীবিকা এখানে জড়িত। জিডিপিতে আমাদের একটি বড় কন্ট্রিবিউশন আছে নারীর ক্ষমতায়ন। আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই ১৯৯৬ সালে যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী টেক্সটাইল খাতকে আরো বেশি প্রসার লাভের জন্য ২৫ পার্সেন্ট নগদ ক্যাশ ইনসিডিউর দিয়েছেন। যার কারণে আজ বস্ত্র শিল্প একটি বড় শক্ত জায়গায় অবস্থান করছে। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই এক্সপোর্টে যেহেতু আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা, আমাদের কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন সেই কারণেই পোশাক খাতের ১ শতাংশ সোর্স ট্যাক্স আগামী ৩ বছরের জন্য ৫০ পয়সা করে করার জন্য আমি বিনীতভাবে সংসদ নেতাকে অনুরোধ করবো।’
খুলনা-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমাদের রিটেনশনে কোটায় যে ডলার থাকে সেই ডলার থেকে আমরা যে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের জন্য বিদেশে খরচ করি সেই জায়গা থেকে যে ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে ২০% সেটি যাতে ১০% নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।’
নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নকে ফোকাস
নিজের প্রতিটি বক্তব্যে নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নকে ‘ফোকাস’ করেন আব্দুস সালাম মূর্শেদী। ব্যতিক্রম ঘটেনি সংসদে মঙ্গলবারও (১৩ জুন)। নিজ এলাকায় উন্নয়নের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খুলনা-৪ এ আমার সব ধরণের উন্নয়নের কাজ চলমান ও শেষ হয়েছে। আমার এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। আমার ৩ থানায় গত ৩ মাসে এভারেজে মাদক ও জমি সংক্রান্ত ৩১ টি মামলা ছিল। আমার এলাকায় ১০০ এর ওপরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, প্রাথমিক, কারিগরি কলেজ ও মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে। ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়েছে। ১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। ৩ উপজেলায় মডেল মসজিদে নামাজ আদায় করছি, একটির কাজ চলমান রয়েছে।’
কালের আলো/এমএএএমকে