অপরাধীর তথ্য থাকবে নখদর্পণে, ডিএমপিতে জোরদার হচ্ছে সিডিএমএস

প্রকাশিতঃ 10:02 pm | June 18, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

সাধারণত কোন অপরাধী গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অন্য থানায় কোন মামলা আছে কি-না, থাকলে কোন অবস্থায় রয়েছে, থানার পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটে এসব তথ্য সংগ্রহে কেটে যায় অনেক দিন। আবার কারও বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশের হাতে হালনাগাদ তথ্য না থাকলে একটি মামলাতেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে দুর্ধর্ষ অপরাধী। এসব বিষয় মাথায় রেখে ফৌজদারি মামলাসংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনায় ক্রাইম ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) জোরদার করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

এতে অপরাধীর যাবতীয় তথ্য নখদর্পণে থাকবে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাদের। তথ্যভান্ডারটিতে এক ক্লিকেই তাঁরা চেক করতে পারবেন অপরাধীর অপরাধ বৃত্তান্ত। রাজধানীর ৫০ টি থানায় সিডিএমএস ব্যবস্থা কার্যকর করতে ২৫৩টি বিট পুলিশের প্রধানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা। আপডেট হালনাগাদের নথিপত্র আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে উপস্থাপনে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ডিএমপি সদর দপ্তর।

জানা যায়, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে সমাজ। পাল্টে গেছে অপরাধের ধরনও। ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। অপরাধীরা জাল ফেলছে অনলাইন প্ল্যাটফরমে। সাইবার ক্রাইমসহ নিত্যনতুন অপরাধে জড়াচ্ছে তরুণরা। এমন বাস্তবতায় অপরাধীদের রাশ টেনে ধরতে নানা কৌশল নিয়েছে ডিএমপি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক নগরীতে অপরাধের মাত্রা কমাতে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে জোর দিয়েছেন। এজন্য অপরাধীদের যাবতীয় তথ্য আপডেট করে সিডিএমএসে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অপরাধ প্রতিরোধেও আগাম সতর্কতামূলক ও ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নজরদারি বাড়ানোর ফলে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। স্বয়ং পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও টিম ডিএমপি’র কর্মযজ্ঞের প্রশংসা করেছেন। অপরাধপ্রবণতা আগের চেয়ে বেশ কমে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মেগা সিটির বাসিন্দারা।

ডিএমপি সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিডিএমএস ব্যবস্থাকে আপডেট করা সম্ভব হলে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুসংহত রাখা সম্ভব। কারণ নির্বাচন আসলেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যায়। দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বাড়ে। দুর্বৃত্তরা এক স্থান থেকে আরেক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে অপরাধ করে পালিয়ে যায়। কিন্তু সিডিএমএস অধিকতর কার্যকর হলে যেকোন অপরাধীর বিষয়ে তথ্য জানা সহজ হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সূত্র জানায়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ডিএমপি’র ৮টি জোনের ডিসি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৮টি বিভাগের ডিসি ও ৫০টি থানার ওসিদের যুগোপযোগী সিডিএমসি’র ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় পুরো কার্যক্রমটি দেখভাল করছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ: মহিদ উদ্দিন।

জানা যায়, দিন কয়েক আগে ডিএমপি’র উদ্যোগে ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সংক্রান্ত এক যৌথ কর্মশালায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে (সিডিএমএস) কীভাবে আরও কার্যকরী করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে মামলা তদন্তের পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সিডিএমএসে অন্তর্ভুক্ত থাকে। ফলে এর মাধ্যমে অনেক সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান করা যায়।’

ডিএমপির ৫০ টি থানায় প্রতিদিনের সব ধরনের মামলা ও অপরাধ-সংক্রান্ত তথ্য সিডিএমএস সফটওয়্যারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ: মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার কালের আলোকে বলেন, ‘বিস্তৃত এই তথ্য ভাণ্ডারের মাধ্যমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও কোনো অপরাধীকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে আর কোনো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে কি-না তা সহজেই জানতে পারবেন। রাজধানীর প্রতিটি এলাকার অপরাধীদের আদ্যোপান্ত এক ক্লিকেই জানা সম্ভব হবে। রাজধানীর খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, চুরি, প্রতারণা, জালিয়াতিসহ সব ধরনের মামলার তথ্য এতে সংরক্ষিত থাকবে। তবে এতে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু এখানে যাতে না থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে