আন্তর্জাতিক এভিয়েশন গেটওয়ের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 7:31 pm | June 20, 2023

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এভিয়েশন হাব হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চলছে তোড়জোড়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীতকরণ ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উন্নয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে মেগা প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মনে করেন আগামীতে বাংলাদেশ হবে আন্তর্জাতিক এভিয়েশন গেটওয়ে। পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোর যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।

আকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও আধুনিক করতে অত্যাধুনিক রাডার সংযোজনসহ সমুদ্র সীমা পর্যন্ত আকাশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে নব উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছবে বাংলাদেশ। এগিয়ে আসা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেও ভোটের মাঠে করে তুলবে আরও ‘অপ্রতিরোধ্য’। বিশ্ব দেখবে নতুন এক বাংলাদেশকে। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় পাল্টে যাওয়া, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে অগ্রসরমান দেশের ভাবমূর্তিকেও করবে আরও উজ্জ্বল।

জানা যায়, পুরো বিশ্বেই আকাশ অর্থনীতির পরিধি বেড়ে চলেছে। এ যাত্রায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে নতুন নতুন এয়ারলাইনস যোগ হচ্ছে। বাড়ছে সেবার পরিধি। উড়োজাহাজে চড়ে গন্তব্যে যাওয়ার পরিমাণও দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশ আকাশপথে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, পর্যটনসহ নানা দিক বিবেচনা করেই এসব দেশের আগ্রহ বেড়েছে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে নতুন নতুন দেশের সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, দেশের এভিয়েশন শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের এভিয়েশন শিল্পের সময়োপযোগী অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কারিগরি ও জন দক্ষতা উন্নয়ন এবং আইন ও নীতি প্রণয়ণ করা হয়েছে। এতে করে দেশের এভিয়েশন শিল্প দ্রুত প্রবৃদ্ধি লাভ করছে। আরও বেশি প্রশিক্ষিত নারী পাইলট গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করেছে।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের এভিয়েশন মার্কেট প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টরের প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় তিন গুণ।’

সূত্র জানায়, সরকারের টার্গেট হচ্ছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার যোগাযোগের সেতুবন্ধন, এভিয়েশন গেটওয়ে হিসেবে বাংলাদেশকে প্রস্তুত করা। সরকারের লক্ষ্যপূরণে খোলনলচে পাল্টে পুরোদমে নানামুখী কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। নতুন এক স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার প্রত্যয়ে ক্রমশ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। চোখ ধাঁধানো অনন্য স্থাপত্যশৈলীতে ভরপুর এই থার্ড টার্মিনালের প্রায় ৭৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেগা এই প্রকল্পের ‘আশা জাগানিয়া’ অগ্রগতিতে নির্ভার আনন্দধারায় এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘টিম বেবিচক’।

জানা যায়, নান্দনিক সৌন্দর্যের এই থার্ড টার্মিনালটির একটি অংশ চলতি বছরের অক্টোবরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের কথা রয়েছে। সর্বাধুনিক প্রুক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বহু কাঙ্ক্ষিত গর্বের এই টার্মিনালটি চালু হলে বছরে দুই কোটিরও বেশি যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে দিন-রাত একাকার করে চলছে নির্মাণযজ্ঞ।

সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের বিশাল থার্ড টার্মিনালটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এখানে থাকবে ১ হাজার ৩০০ গাড়ি পার্কিং সুবিধা। প্রশান্তির ছোঁয়া থাকবে চারদিকে। দীর্ঘ লাইনের ভোগান্তি থাকবে না। প্রস্তুত থাকবে ১১৫ টি চেকিং কাউন্টার। ৬৪ টি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে দ্রুত সেবা পাবেন যাত্রীরা। সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে।

সূত্র মতে, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এই নতুন টার্মিনালে থাকবে ৬৩ হাজার স্কয়ার মিটার আয়তনের সর্বাধুনিক কার্গো ভিলেজ। ৩৭টি অ্যাপ্রোন পার্কিংয়ে এক সঙ্গে পার্ক করা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। টার্মিনাল ভবনের আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটার। পুরো অবকাঠামো হবে পরিবেশবান্ধব। থাকবে পানির অপচয় রোধ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সুব্যবস্থা। সবুজ বৃক্ষরাজির সমারোহে বিমানবন্দরজুড়ে থাকবে প্রাকৃতিক আবহ।

সূত্র জানায়, সাগরগর্ভে এখন দৃশ্যমান কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের রানওয়ের কাজ। এই নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে পরিণত হবে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকাশে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে এই বিমানবন্দর। রিফুয়েলিংয়ের জন্য কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক রুটগুলোর দূরত্ব কমবে- চলতি বছরের বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ক উপস্থাপনা অবলোকনকালে এমনটিই বলেছিলেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিমানের রিফুয়েলিংয়ের জন্য এখন যেমন সবাই দুবাইকে গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করে, সে রকম কক্সবাজার গেটওয়ে হিসেবে পরিণত হবে। আন্তর্জাতিক রুটে রিফুয়েলিংয়ের জন্য কক্সবাজার কম দূরত্বের মধ্যে পড়বে, ঘুরে যেতে হবে না। সরাসরি কক্সবাজার থেকে তারা এই সুবিধা নিতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো রিফুয়েলিংয়ের জন্য কক্সবাজার এলে দেশের আয় বাড়বে।’

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সেখানকার ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও কার্গো স্টেশন স্থাপনের জন্য নেয়া মেগা প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর দিকনির্দেশনায় সম্মুখে থেকেই এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়ে মহাকাব্যিক অর্জনে আবেগ উদ্দীপ্ত ও দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি কালের আলোকে বলেন, ‘বিমানবন্দর যেকোনো দেশের আয়না। একজন পর্যটক কোনো দেশে এলে বিমানবন্দর দেখে সে দেশকে প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন করে। বিমানবন্দর আধুনিক হলে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। থার্ড টার্মিনালসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের অগ্রযাত্রায় নতুন নতুন পালক যোগ হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে