ছদ্মবেশী গৃহকর্মী অজ্ঞান করে লুটে নেয় টাকা ও গহনা
প্রকাশিতঃ 5:14 pm | August 03, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রাজধানীর হাতিরঝিল থানার দিলু রোড এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার আলী। নিজ বাসায় মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী হিসেবে নুরজাহান (ছদ্মনাম) নামের এক নারীকে নিয়োগ দেন। নিয়োগের তিন দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় স্ত্রী ও গৃহকর্মী নুরহাজানকে রেখে অফিসে যান গৃহকর্তা মনোয়ার। পরে আমেরিকায় থাকা তাদের প্রবাসী মেয়ে ফোন করে জানান, তার মা ফোন রিসিভ করছে না। বাসায় ফিরে স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান মনোয়ার। পুরো বাড়ি তছনছ, নুরজাহান নামে নিয়োগ দেওয়া সেই গৃহকর্মী বাসায় নেই।
গৃহকর্মী নিয়োগের তিনদিনের মাথায় এমন ঘটনায় হতভম্ব মনোয়ার আলী ওই সময় সব ফেলে স্ত্রীকে নিয়ে মগবাজার ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে যান এবং সেখানে ভর্তি করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১ টার মধ্যে স্ত্রী রেজিনা রহমানকে (৫৫) বাসায় একা পেয়ে কাজের মহিলা নুরজাহান (ছদ্মনাম) ও অজ্ঞাত আরও একজন মিলে কৌশলে অজ্ঞান করে বাসায় থাকা সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ নিয়ে পালিয়ে যায়। স্ত্রী সুস্থ হলে তিনি হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার দায়িত্ব থানা পুলিশ থেকে পিবিআই এর উপর ন্যস্ত হবার পর খোঁজ মেলে ছদ্মবেশী নুরজাহানের। তার আসল নাম বিলকিস। তাকে গ্রেফতারের পর পিবিআই জানায়, পেশাদার চক্রের সদস্য তিনি। একেক বাসায় একেক নামে গৃহকর্মীর কাজ নেন তিনি। এরপর সুযোগ বুঝে নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করে চম্পট দেয় বিলকিস।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও ৬০ ফিট এলাকাস্থ পিবিআই(ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গৃহপরিচারিকা সেজে বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে গৃহকর্ত্রীকে অজ্ঞান করে বাসার নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্য নুরজাহান। তিনি মোসা. বিলকিস বেগম, কনা, রুজিনা ও নুরজাহান (৪০) নামে একাধিক বাসায় চুরি বা লুট করেছে।
গতকাল বুধবার (২ আগস্ট) রাজধানীর কোতোয়ালী থানা এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ দল। তার স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহে ধোবাউড়ায় হলেও এখনও তিনি স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন বাবার বাড়ি জামালপুর মেলান্দহ রুকনাই গ্রামকে।
বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাশের বাসার দারোয়ান গোলাম মোস্তফার সহযোগিতায় ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মনোয়ারের নিউ ইস্কাটনের বাসায় কাজের সুযোগ নেয় নুরজাহান। মামলার বাদী সরল বিশ্বাসে ধূর্ত নুরজাহানকে তার বাসায় কাজ করার জন্য প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। এর তিনদিন পরই চুরির ঘটনা ঘটে।
মামলা নথিভুক্ত হবার পর হাতিরঝিল থানার এসআই রহমত উল্লাহ রনির উপর তদন্তভার অর্পিত হয়। তিনি তদন্ত শেষে মামলার ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। হাতিরঝিল থানা পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদীর না-রাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
এরপর সে মামলা তদন্ত করছিল ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলাম মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে কাজের মহিলা সেজে কৌশলে বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যদের সনাক্তকরণসহ গ্রেফতারে একটি টিম গঠন করেন৷ এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল গ্রেফতার হয় নুরজাহান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, নুরজাহান ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরজাহান নিউ ইস্কাটনের ওই বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা এবং হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কার ডিএমপি ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা এবং জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করার কথা স্বীকার করেছেন।
পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) প্রধান বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বাসায় একই কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছে। পিবিআই অনুসন্ধান জানতে পেরেছে নুরজাহানের নামে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় মোট চারটি চুরির মামলা রয়েছে।
শেরে বাংলা নগর থানার উল্লেখিত মামলায় আসামি বিলকিস নামে সোহেলের বাসা হতে ৪০ হাজার টাকা, ভাটারা থানায় মামলায় রুজিনা (৩৮) নামে অজ্ঞাত ঠিকানা ব্যবহারে ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমানের বাসা হতে নগদ ১০ লাখ টাকা ও অনুমান তিন ভরি ওজনের বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণালঙ্কার লুট করেন। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় কনা ভুক্তভোগী মুশফিক ইসলামের বাসা হতে নগদ দেড় লাখ টাকা ও সোয়া ৫ লাখ মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ তিন থানার মামলার ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
পেশাদার এ প্রতারক নারীর পেছনে আরও কেউ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এ তদন্তাধীন হাতিরঝিল থানার মামলায় লুণ্ঠিত নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারসহ তার সঙ্গে আরও কারো যোগসাজশ রয়েছে কিনা তা জানতে রিমান্ড চেয়ে তাকে বিজ্ঞ আদালতের সোপর্দ করা হয়েছে।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি