বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় গুরুত্ব
প্রকাশিতঃ 9:51 pm | August 23, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
নানা স্তরে আলোচনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও জোরদার করতে চায়। স্বাধীনতার পর থেকে দুটি দেশের সহযোগিতার ভিত্তি সুদৃঢ় হওয়ায় প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে এই সংলাপের নবম বৈঠকের পর এবার বাংলাদেশে বুধবার (২৩ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে দশম দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপ। ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) মাল্টিপারপাস হলে দু’দিনব্যাপী সংলাপে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা চুক্তি জিসোমিয়া ও আকসা নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে বিভিন্ন কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাইরেও বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের একটি প্রধান কারণ। বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরের একটি উপকূলীয় ও অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং একটি প্রধান সামুদ্রিক বাণিজ্য রুট। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থান, চিত্তাকর্ষক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এবারের প্রতিরক্ষা সংলাপের লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি সুদৃঢ়। এই সম্পর্ক বহুমাত্রিক, বহুমুখী এবং সর্বদা বিকশিত। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতার প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত সহায়তার বিষয়টিও সুস্পষ্ট।

আইএসপিআর আরও জানায়, প্রতি বছর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অনেক সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে একসাথে কাজ করে আসছে। দুই দেশের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সামরিক সফর বিনিময় সামরিক সহযোগিতার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর আগে গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা–ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপের নবম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ঢাকায় শুরু হয়েছে দুই দেশের মধ্যে ১০ম দ্বিপাক্ষিক সামরিক সংলাপ।
আইএসপিআর জানায়, এই সংলাপে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয় ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, দুর্যোগ মোকাবিলা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন, যৌথ অনুশীলন ও মোতায়েন, কর্মশালা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হবে।

এই দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অপারেশন্স ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ মাসীহুর রহমান।যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জেমস থমাস। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই সংলাপটি ২৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।
এর আগে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান’র সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে 10th BD-USA Bi-Lateral Defence Dialogue (BDD) এ অংশগ্রহণকারী ইউএসএ প্রতিনিধিদলের প্রধান সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে