বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ 3:45 pm | September 07, 2023
কালের আলো ডেস্ক:
এ বছরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের সংস্থাটি জানায়, এ বছরের এপ্রিলে সংক্রমণ শুরুর পর পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মোট ৬৫০ জন মারা গেছেন। শুধু আগস্ট মাসেই ৩০০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, “এই সংক্রমণ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বড় আকারের চাপ প্রয়োগ করছে। রাজধানী ঢাকায় রোগের প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও দেশের অন্যান্য অংশে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ছে।”
সংস্থাটি জানায়, তারা বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করেছে যারা সার্বিক তত্ত্বাবধানে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছেন। একইসঙ্গে গবেষণাগারের সক্ষমতা ও আক্রান্তদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়তা করছেন তারা।
ডেঙ্গু একটি সংক্রামক রোগ যা সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে দেখা দেয়। এর উপসর্গের মধ্যে আছে জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেশীতে ব্যথা এবং সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রক্তপাত ঘটা, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীত রোগ ও জাইকার মতো মশাবাহিত রোগগুলো দ্রুত এবং দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে, যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী।
সংস্থাটির অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স পরিচালক আবদি মাহামুদ সম্মেলনে বলেন, “এ ধরনের সংক্রমণের ঘটনাগুলো আসন্ন জলবায়ু সংকটের অশনি সংকেত দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এ বছরের বাড়তি উষ্ণতা সৃষ্টিকারী এল নিনোর মতো কিছু আবহাওয়াগত নিয়ামক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বেশ কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ পর্যায়ের ডেঙ্গু সংক্রমণ সৃষ্টি করেছে।”
গত সপ্তাহে গুয়াতেমালায় ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
ষাটের দশকে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সর্বপ্রথম ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তখন এটি “ঢাকা জ্বর” নামে পরিচিত ছিল। ২০১০ সালে এসে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
অন্যান্য রোগের মতো ডেঙ্গুর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সময়মতো রোগ শনাক্ত, গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণ যেমন গুরুতর পেটে ব্যথা, ক্রমাগত বমি, দ্রুত শ্বাস নেওয়া এবং জ্বর কমার পর মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া এসব লক্ষণ শনাক্ত এবং চিকিৎসাই হলো এ রোগে মৃত্যুর হার কমিয়ে ১% এর চেয়ে নিচে নামিয়ে আনার মূল উপায়।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “সারা বছর ধরে স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগের পরিকল্পনাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। এর জন্য ক্ষুদ্র পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে। আমাদের চিহ্নিত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নিয়ে একটি ওয়েবভিত্তিক ডেঙ্গু নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আক্রান্তের তথ্যের পুনরাবৃত্তি এড়াতে টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের সব এলাকার হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে চিহ্নিত করা উচিত।”
সব সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক মশা নজরদারি কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশের পাশাপাশি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোরও তাগিদ দেন অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, “রোগীদের ভালো ব্যবস্থাপনার জন্য ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এটি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। সব উপসর্গ থাকলেও ডায়াগনস্টিক ল্যাবে অনেকের নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েনি। তাই বাজারে যেসব ডায়াগনস্টিক কিট পাওয়া যায়, সেগুলোর মানের ওপরও জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।”
আইইডিসিআরের সাবেক এ পরিচালক আরও বলেন, একইসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের উচিত নিজেদের কীটনাশক স্প্রের নীতি পর্যালোচনা করা। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা দরকার। গবেষণার মাধ্যমে সারা বছর এসব কার্যক্রমের নিরীক্ষণ অবাহত রাখা উচিত।
কালের আলো/টিআর