গণভবনে জনপ্রতিনিধিদের মিলনমেলায় নৌকাকে বিজয়ী করার দৃঢ় অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 10:40 pm | September 14, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

দেশে প্রথমবারের মতো বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হলো ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস’। ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’ স্লোগান নিয়ে উদযাপিত হয় দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজন করা হয় সমাবেশ। যেখানে সারাদেশ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচিত প্রায় ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি উৎসব-আনন্দে যোগ দেন। জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি কার্যত রূপ নেয় মিলনমেলায়। এই মিলনমোহনার ‘প্রাণভোমরা’ ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি। এ সময় সমস্বরে মন্ত্রীর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে হাত তুলে পঞ্চমবারের মতো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ব্যালট বিপ্লবের দৃপ্ত অঙ্গীকার করেন জনপ্রতিনিধিরা।

জানা যায়, গত ১৫ বছরে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় কী কী উন্নয়ন করেছেন সেই চিত্র স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে এই জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নবার্তাও তৃণমূলে পৌঁছে দেন প্রধানমন্ত্রী। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মানুষের ভোটে তাঁরা নির্বাচিত, জনগণের সেবক।

দেশের প্রতিটি গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, ‘টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। যার জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমি জানি, এখনও অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবারও যদি জনগণের সেবা করবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দেবো। কারণ, প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে উঠবে।’

দেখা গেছে, জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উৎসব আমেজে সকাল ৮টা থেকে গণভবনে প্রবেশের লাইনে দাঁড়ান তৃণমূল জনপ্রতিনিধিরা। ৯টায় গণভবনের ভেতরে প্রবেশ শুরু করেন তাঁরা। গণভবনের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররা। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এই বৈঠক থেকে প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও প্রদান করেন।

সভায় জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার পাশাপাশি সরকারের মেগা প্রকল্পসমূহের ইতিবাচক বার্তা মাঠপর্যায়ে তুলে ধরার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সমাবেশের মাধ্যমে উপস্থিত ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি দেশের প্রায় ৬৭ হাজার জনপ্রতিনিধির কন্ঠস্বর হয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে-ময়দানে কাজ করার দৃপ্ত শপথ নেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি নিজের বুদ্ধিদীপ্ত ও তথ্যবহুল বক্তব্যের ফাঁকে উপস্থিত জনপ্রিতিনিধিদের প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রীকে আপনারা ক্ষমতায় দেখতে চান?’ এ সময় সবাই হাত তুলে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আকাক্সক্ষা প্রিয় নেত্রী ক্ষমতায় থাকুক। এই ক্ষমতা থাকার আকাক্সক্ষা শুধু মুখে আর হাত তোলার মাধ্যমে নয়। আমরা মাঠে ময়দানে যাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা মার্কা প্রতীকের জন্য মনোনয়ন দিবেন, আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাকেই বিজয়ী করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের আজ এখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। আমরা এই মর্যাদার ঋণ শোধ করবো আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার মাধ্যমে।’

আপনারা করবেন, জানতে চান মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা দৃঢ়কন্ঠে মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের পর মন্ত্রী বলেন, ‘সবাই আমরা করবো ইনশাআল্লাহ। আমরা সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমি মনে করি, মেম্বার, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র-সবাই যদি মাঠে ময়দানে কাজ করে দৃঢ়তার সাথে তাহলে যেকোন চ্যালেঞ্জে আমরা উত্তীর্ণ হবো। যারা গুন্ডামি করবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে তাদের আমরা প্রতিহত করবো।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর মন্ত্রী হওয়ার গল্প
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম। অতীতের ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। মন্ত্রণালয় পরিচালনায় স্বাক্ষর রেখেছেন দক্ষতার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৎ, প্রাজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বকে সব সময়ই মোট দাগে উপস্থাপন করেন সরকারের দায়িত্বশীল এই মন্ত্রী। এবার প্রথমবারের মতো নিজের মন্ত্রী হওয়ার গল্প শোনালেন তৃণমূল থেকে ওঠে আসা এই রাজনীতিক।

জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি নিজের মন্ত্রীত্বের সময়কালকে জনস্বার্থে নিবেদন করার এবং জবাবদিহিতার দৃষ্টিভঙ্গিকে বর্ণাঢ্য ক্যানভাসে তুলে আনেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে বলেন, আপনি হাজার কোটি টাকার মালিক। কিন্তু নেত্রীকে আমি কখনও কোন কিছু অফার করতে পারিনি। আমি নেত্রীকে কখনও বলিনি আমাকে মন্ত্রী বানান। আমি কাউকে তদবির করিনি। কিন্তু নেত্রী আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বানিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অবদান এক মুহুর্তের জন্যও ভুলি নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন আমি দিন-রাত কাজ করেছি। আমি চিরকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

এবার কেন ১৪ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস’?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ অনুমোদনক্রমে প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস পালন করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস অতিক্রম হওয়ায় শুধুমাত্র এই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন করা হচ্ছে’ বলে অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার মূলনীতি গ্রাম শহরের উন্নতি’-এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে দেশের ১২ টি সিটি করপোরেশন, ৬১টি জেলা পরিষদ, ৩২৯টি পৌরসভা, ৪৯৫ টি উপজেলা পরিষদ এবং ৪ হাজার ৫৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কাক্সিক্ষত সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে সামনে উপস্থিত হয়েছেন। আজ প্রথমবারের মতো জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস পালনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনি আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন এবং কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। এজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং সকল জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে আমরা আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

কালের আলো/বিএসবি/এমএইচ