কারাবন্দীদের অন্যরকম দিন! স্বাভাবিক জীবনে ফেরার মন্ত্র শেখালেন মাশরাফি

প্রকাশিতঃ 3:24 am | October 05, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বন্দিশালা থেকে সংশোধনাগারে রূপান্তরিত হচ্ছে কারাগার। নানামুখী কর্মপরিকল্পনা আর উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুলে দিচ্ছে আলোকময় জীবনের দুয়ার। নিজ ভুবনে চিরভাস্বর সূর্যকে রাঙিয়ে দিতে কারাবন্দীদের মাদক ও অপরাধমুক্ত স্বাভাবিক জীবন উপহারের অনন্য প্রয়াসে এবার আয়োজন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু প্রিজন্স কাপ’ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের।

সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের রূপকার, ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি কার্যত মাঠমুখী করেছে রুটিন জীবন ধারায় অভ্যস্ত বন্দীদের। নিশ্চিত করেছে অন্যরকম এক উৎবের আবহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ হাজার বন্দীর বাঁধভাঙা হাসি আর নির্মল আনন্দে নতুন মাত্রা পেয়েছে ‘মধ্যমণি’ সাবেক টাইগার কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজা এমপিকে নিজেদের হাতের নাগালে পেয়ে। শুধু বেলুন আর পায়রা উড়িয়ে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনের চিরায়ত অনুষ্ঠানের ছকে নিজেকে সীমাবদ্ধ না করে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ব্যাট ও বল হাতে বন্দীদের সঙ্গে মেতে ওঠলেন ২২ গজে। বিনিময় করলেন কুশলও।

বুধবার (০৪ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের নজরকাড়া এমন আয়োজনে কারাবন্দীদের মাদকমুক্ত স্বাভাবিক জীবন উদযাপনের মন্ত্র শেখালেন বাংলার ক্রিকেটের এই প্রাণভোমরা। বন্দীদের জন্য বিভিন্ন সংশোধনমূলক ও মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকেও বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।

নড়াইলের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বললেন, ‘কর্মমুখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ লাভ করে বন্দীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। তাঁরা সুনাগরিক হয়ে সমাজে ফিরে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।’

কারা সূত্র জানায়, বন্দীদের উৎসাহ দিতে ‘বঙ্গবন্ধু প্রিজন্স কাপ-২০২৩’ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন কারাগারের স্টাফরাও। বন্দীদের দল কেইস টেবিল রাইটার ও স্টাফদের দল কিংস সুপার স্টার উদ্বোধনী খেলায় অংশ নেয়। মাশরাফি বিন মুর্তজা বন্দীদের কেইস টেবিল রাইটারদের পক্ষে বোলিং ও ব্যাটিং করেন। টুর্নামেন্টে বন্দিদের ৯টি ও স্টাফদের নিয়ে গঠিত ১টি মোট ১০টি টিম অংশগ্রহণ করছে।

জানা যায়, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এই স্লোগানকে আক্ষরিক অর্থে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কারাগার হবে সংশোধনাগার এই দৃঢ় অঙ্গীকারকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বন্দি-পরবর্তী জীবনে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনতে নতুন জীবনের স্বপ্নে উজ্জীবিত করেছেন। কারাগারগুলোতে এখন পুরোদমে চলছে মাদকবিরোধী মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম, মেডিটেশন ও কর্মমুখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। হচ্ছে বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনেক কার্যক্রম।

বুধবার (০৪ অক্টোবর) টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক মানবতার আলোকবর্তিকা, মমত্ববোধ, মহানুভবতা ও উদারনৈতিক মানসিকতার জন্য ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত চতুর্থবারের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় কারাবন্দিদের সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের প্রশ্নে আরও প্রত্যয়ী হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বন্দিদের মাদকের পথ ত্যাগ করে সমাজে সুনাগরিক হিসেবে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অবদান রাখতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ সবাইকে মাদক ও অপরাধ পরিহার করে মুক্ত জীবনে ফিরে গিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শামিল হতে অনুপ্রেরণা জোগান কারাবন্দীদের। এ সময় অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল সুজাউর রহমান, কারা উপমহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে