ঈর্ষণীয় সাফল্যে অনন্য-অপ্রতিরোধ্য র্যাব
প্রকাশিতঃ 10:21 pm | March 05, 2024
কালের আলো রিপোর্ট :
উগ্র জঙ্গিবাদ দমনে সব সময়ই কার্যক্রম ভূমিকা রেখেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সন্ত্রাসবাদ দমনেও রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। জলদস্যু বা চরমপন্থীদের মূলোৎপাটন, মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান কিংবা গুরুতর অপরাধীদের গ্রেফতার সবক্ষেত্রেই অনুকরণীয় এক উদাহরণ এই এলিট ফোর্স। অবৈধ অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধারেও অর্জন করেছে সুনাম।
র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) এম খুরশীদ হোসেনের সুদৃঢ় ও গতিশীল নেতৃত্বে সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধেরও এক নজির স্থাপন করেছেন র্যাব ফোর্সেসের সদস্যরা। র্যাব ফোর্সেসের সাফল্য আলোড়িত-আন্দোলিত করেছে বীরের জাতি বাঙালিকে।
সতের কোটি বাংলাদেশের হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই ২০ পেরিয়ে ২১ বছরে পা রেখেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মুঠো মুঠো সাফল্যে উদ্ভাসিত করেছেন নিজেদের। র্যাবের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার (৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ দরবার। এই দরবারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো.কামরুল আহসান, র্যাব ফোর্সেসের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তবে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে বুধবার (৬ মার্চ)। বর্তমানে সারাদেশে র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এসব ব্যাটালিয়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গেই।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে অভিষিক্ত হন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি এম খুরশীদ হোসেন। দেশের জনগণের সবচেয়ে প্রিয় আস্থাভাজন সংস্থার ডিজি হিসেবেও তিনি নিজের দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের সুনাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়নের গতিধারাকে আরও তরান্বিত করতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সমুন্নত রেখে র্যাব ফোর্সেসকে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গর্বিত অংশীদার করেই তিনি কাজ করে চলেছেন অবিরাম। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাওয়ার সুদৃঢ় প্রত্যয়ের কথা উচ্চারণ করেন ডিজি এম খুরশীদ হোসেন। র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়টিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাধ দমনে র্যাবের অমর কীর্তিতে নবপ্রাণের সঞ্চার করে র্যাব ফোর্সেসের প্রতিটি সদস্যকে উজ্জীবিত-উদ্দীপ্ত করার পাশাপাশি জুগিয়ে চলেছেন অনি:শেষ প্রেরণা ও অসীম সাহস।
এলিফ ফোর্স র্যাবের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণেও র্যাব ডিজি এম খুরশীদ হোসেন সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘এলিট ফোর্স হিসেবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নির্মূলসহ জনমানুষের নিরাপত্তায় র্যাব ফোর্সেস সদা জাগ্রত। আমাদের সুদীর্ঘ পথচলায় আপনাদের অব্যাহত সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।’
র্যাবের সাফল্যের সারসংক্ষেপ
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে রোল মডেল। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে র্যাব জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। র্যাব ফোর্সেস জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৯৯ জন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৩৯ জন জেএমবি সদস্য। বিশেষ করে ২০২৩ সালে র্যাবের অভিযানে ৪ জেএমবি সদস্যসহ ১২০ জন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় দেশী-বিদেশী অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিভিন্ন ধরণের উগ্রবাদী বই ও লিফলেট। শুধুমাত্র অভিযান নয়; জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে ও জনসম্পৃক্ততা অর্জনে র্যাব ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে আভিযানিক প্রক্রিয়ায় গ্রেফতারের পাশাপাশি জঙ্গিদের অর্থের উৎস এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রাপ্তি বন্ধ করতেও র্যাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া র্যাব জঙ্গি আত্মসমর্পণে বিশেষ উদ্যোগ ‘র্যাব ডি রেডিক্যালাইজেশন ও রিহ্যাবিলিটেশন’ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। র্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে ৩১ জন বিপথগামী তরুণ-তরুণী জঙ্গিবাদ ছেড়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। গত বছরের ২ জানুয়ারি ‘নব দিগন্তের পথে’ অনুষ্ঠানে র্যাব ডিজি এম খুরশীদ হোসেনের কাছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৯ জন জঙ্গি বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে উত্তরায় স্কুল ছাত্র আদনান হত্যাকান্ডের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি আলোচনায় আসে। চাঞ্চলকর এই হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করে র্যাব। পরবর্তীতে উত্তরা, গাজীপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্কুল ছাত্র শুভসহ আরও কয়েকটি হত্যাকান্ড ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কিশোর গ্যাং নামক অপসংস্কৃতি রোধকল্পে র্যাব এসব হত্যাকাণ্ডের আসামীদের গ্রেফতার করে। র্যাব ফোর্সেস জানায়, ২০১৭ সাল থেকে র্যাব এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের ১ হাজার ১২৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে মোট ৪০ জনকে (৩০ জনকে অর্থদন্ড এবং ১০ জনকে মুচলেকা) পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অভিযানের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে র্যাবের অভিযানে কিশোর গ্যাং এর বিভিন্ন গ্রুপের ৩৪৯ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানায়, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা এলিট ফোর্স র্যাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং এটি র্যাবের চলমান আভিযানিক কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। র্যাব সশস্ত্র অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও অপরাধ দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। দেশের সন্ত্রাস কবলিত এলাকাসমূহে র্যাবের অভিযানের ফলে সাধারণ মানুষ শান্তিতে জীবন যাপন করছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে এসেছে। এলিট ফোর্স র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিরলস গ্রেফতার অভিযান চলমান রেখেছে। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীর ঢাকা ও সীমান্তবর্তী জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে ১৯ হাজার ৭৫৫টি বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র এবং ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৭০৩ রাউন্ড গোলাবারুদসহ সর্বমোট ১৪ হাজার ৪১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। উদ্ধার করা হয় রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, বিভিন্ন প্রকার শেল, ককটেল ও গোলাসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। এর মধ্যে ২০২৩ সালে বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মোট ২৯৩ জন’কে গ্রেফতার করে র্যাব। উদ্ধার করা হয় ৬১৮টি বিভিন্ন প্রকার দেশী-বিদেশী অস্ত্র, ১০৩টি ম্যাগাজিন, ১ হাজার ৩৬২ রাউন্ড গোলাবারুদ ২ হাজার ১৩৪টি বিভিন্ন ধরণের ককটেল, বোমা, গ্রেনেড এবং ৫৯.৫৩ কেজি বিস্ফোরক।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৯৩৯ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসব অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৯৫ লক্ষ ২৯ হাজার ৪১৯ পিস ইয়াবা, ১২৭.২৫০ কেজি হেরোইন, ১,২৩,০৫৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৪,৭০০ বোতল বিদেশি মদ, ৭৮,২৪২.৩৮ লিটার চোলাই মদ, ২৫,৮৫৩.৩৫ কেজি গাঁজা, ৬,৭৫৬ বোতল বিয়ার, ১১.৪৪৫ কেজি আফিম, ৭০,৫২৭ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশন, ২,১৮,৯৮৩ পিস ড্রাগ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য। এছাড়া ২০২৩ সালে বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে ৪৯২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, ২০২৩ সালে রাজধানীর ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে সর্বমোট ৬৩৪ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। রাজধানীর ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব ফোর্সেস’র গোয়েন্দা নজরদারী ও জোরালো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কালের আলো/এমএএএমকে