টিটু ‘নগর পিতা’ নয় ‘নগর সেবক’

প্রকাশিতঃ 10:48 am | March 06, 2024

দেশের বারোতম সিটি করপোরেশন ময়মনসিংহ। দ্বিতীয়বারের মতো ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট আগামী ৯ মার্চ। এই নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার হচ্ছে জনপ্রত্যাশা। বিএনপি না এলেও এবারের ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এবং উৎসব মুখর। দলীয় ব্যানারে না হওয়ায় উন্মুক্ত ভোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াই। সদ্য বিদায়ী মেয়র ইকরামুল হক টিটুতেই কী আস্থা না কী নগরবাসী চান নতুন মুখ? এসব বিষয়কে সামনে রেখে চলছে জল্পনা। ভোট কেমন হবে, নতুন মেয়রের কাছে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দ্বিতীয় পর্ব। ময়মনসিংহ মহানগরী ঘুরে এসে প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের জ্যেষ্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক রাইসুল ইসলাম খান অনিক

প্রশ্নটি না কী সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহ নগরীর কোথাও কোথাও ঘুরেফিরেই উচ্চারিত হয়েছে। উত্থাপিত প্রশ্নটি নগরবাসীকে যতটা না ভাবিয়েছে ঢের চর্চিত হয়েছে ক্ষমতাসীনদের একটি পক্ষের অন্দরে। আওয়াজের ফাঁকে পক্ষটির হম্বিতম্বি বিরক্তিকর ঠেকেছে। হেন ও তেন করেঙ্গা প্রবণতায় বিশ্বাসীরা বিতর্ক ছড়াতেই ‘নগর পিতা’ আর ‘নগর সেবক’ প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসেন। লম্বা লম্বা মিঠাকথায় বা কেউ কেউ বিভ্রান্তিকর অপতথ্যে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো.ইকরামুল হক টিটুর নামের পাশে ‘নগর পিতা’ উপাধি বসিয়ে ‘নগর সেবক’ চাই এমন ধাপ্পাবাজিতে মেতে ওঠেন।

প্রকৃত অর্থেই চলমান, আলোকিত আর গতিময় ময়মনসিংহের স্বপ্ন দেখিয়েছেন যিনি, রাজনীতিক আর জনপ্রতিনিধিদের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর টেকসই ফর্মুলা যার সেই ইকরামুল হক টিটু’র বিপরীতে নতুন করে অন্য কাউকে ‘নগর সেবক’ বানানোর চটকদার স্লোগান হালে পানি পায়নি। নগরীর বাসিন্দাদের গগনচুম্বী আশা-আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে তাদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন ও অসীম হৃদয়শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নগরীর সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই যার ব্রত সেই তাঁর বিষয়ে এমন তত্ত্ব বিকৃত মস্তিষ্কের রাজনীতিকদের দৈন্যতার প্রকাশ বলেই মনে করছেন অনেকেই।

নগরীর দুর্গাবাড়ী রোড এলাকার একটি ওষুধের ফার্মেসীতে দাঁড়িয়ে রায়হানুল ইসলাম নামের শিক্ষিত যুবক কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন এমন-‘ঘোড়ায় চড়ে নয়, ঘোড়া থেকে নেমেই রাজ্য শাসন করতে হয়। মেয়র টিটু ঠিক তেমনি। দিনের পর দিন নানা কাজের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন। জনসাধারণের সুবিধার জন্য নগরভবনে নিজের দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন। এমন নেতা কেতাবী ভাষার ‘নগর পিতা’ নয় ‘নগর সেবক।’

এক সময় ময়মনসিংহের পরিবেশ দূষিত হয়েছে বর্জ্য-আবর্জনায়। নাকে-মুখে রুমাল দিয়ে চলতে হতো পথ। দিন পাল্টেছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল করুণ। ওই অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শেকলবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছে অনেকটাই। এখন আর কয়েক দিন পানির নিচে ডুবে থাকতে হয় না। কয়েক ঘণ্টাতেই পানি নেমে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা তৈরি হলে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে না বসে অনায়েসেই পানিতেও নেমে যান। শক্ত সড়ক অবকাঠামো, আলোকায়ন দৃশ্যপটের এমন পরিবর্তনের রূপকার মেয়র টিটু। বছরজুড়েই সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করেন অবিরাম। তাঁর পক্ষেই সম্ভব বাসযোগ্য ময়মনসিংহ উপহার দেওয়া-ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকে পান চিবুতে চিবুতে জমজমাট ভোটের আলোচনায় টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু’র প্রতি এভাবেই নিজের সমর্থন জানালেন আনোয়ারুল হক। নগরীর জিলা স্কুলের এক ছাত্রের বাবা তিনি। গন্তব্য গোহাইলকান্দি থেকে সানকিপাড়া রেল ক্রসিং।

কথায় সমর্থন দিয়ে পাশ থেকে একজন বললেন, ‘করোনাকালেও রাজনীতিকদের ঘুম ভাঙিয়েছিলেন কিন্তু মেয়র টিটুই। এখন তাঁর সঙ্গে লড়াইয়ে নামা প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কীভাবে করবেন সেটা কেউ বলছেন না। প্রতিশ্রুতি দেয়া এক কথা আর কাজের অগ্রগতি অন্য কথা। নির্বাচনের আগে এ রকম প্রচারণা এটা গতানুগতিক কাজ। এদের ওপর আমাদের বিশ্বাস নেই। আবার একপক্ষের একজন তার পক্ষের এক প্রার্থীকে যেভাবে নাস্তানাবুদ করছেন সেটি দেখেও অনেকেই মুখ টিপে হাসছেন।’

অটো রিকশা ছুটছে সড়ক দাপিয়ে। কথার মাঝপথেই হাঁক দিলেন চালক ইয়াসিন মিয়া। আঞ্চলিক ভাষাকে প্রমিত বাংলায় বললে দাঁড়ায় এমন- ‘টিটুর মতো মেয়র চাই। তাঁর মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণ মানসিকতা বা দাম্ভিকতা নেই। তিনি নগরীর সব সমস্যাগুলো জানেন। সার্বক্ষণিক নগরের সমস্যা নিয়ে সময় দিতে পারা কাজ করতে পারা মানুষ তিনিই।’

আলাপচারিতায় ওঠে এলো ভোটের নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য প্রার্থীদের কার কী অবদান এসব বিষয়াদিও। একজন বললেন, ‘সামাজিক ক্ষেত্রে ঘড়ি প্রতীকের সাবেক মেয়র অনেক কিছু করেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। গত ৫ বছরে সমৃদ্ধ ও সুস্থ নগরী গড়ার ক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। পথচারীর জন্য নিরাপদ ফুটপাত নির্মাণ করে দিয়েছেন। মানুষ নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও আনন্দে হাঁটার সুযোগ পেয়েছে। জয়নুল উদ্যান, বিপিন পার্ক ও অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম করে নগরীর সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার পথ সুগম করেছেন। ভোটে কেউই মেয়র টিটুর সঙ্গে কুলিয়ে ওঠতে পারবে না।’

মহুয়া-মলুয়া আর চন্দ্রাবতী রাতের প্রচ্ছদপট মৈমনসিংহ গীতিকার লোক ঐতিহ্যের পটভূমি আর জমিদারী পরগনার ঐতিহ্যের শহর ময়মনসিংহ। আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে মসিক নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। ব্রক্ষপুত্র নদের উপকন্ঠের এই নগরীতে এখন বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার। বিশেষ করে এই নির্বাচনকে হার-জিত নির্ধারণ করতে পারেন তরুণ ভোটাররা। আসন্ন ভোটকে ঘিরে এই তরুণ ভোটাররা নতুন স্বপ্ন বুনছেন। সমস্যা সমাধানে সিদ্ধহস্ত এমন জনবান্ধব নেতৃত্বকেই ‘নগর সেবক’ হিসেবে পছন্দ তরুণ ভোটারদের। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দের তালিকায় অগ্রভাগে রয়েছেন মো.ইকরামুল হক টিটু।

তাদের ভাষ্যমতে- তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান, বয়স ভুলে বন্ধুর মতো মিশতে পারেন এবং তরুণ-যুবাদের মনের ভাষা বুঝে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন এমন প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র টিটু। তারুণ্যের বিবেচনায় প্রথম অগ্রাধিকার পাবেন তিনিই। বিজয়ের ফসল তিনিই ঘরে তোলবেন।

শহরের নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, কর্মবীর, সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিই সিটি করপোরেশনের চেয়ারে আসীন হবেন। সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা পূরণের পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রমকেও যিনি গতিশীল রাখতে পারবেন এমন কাউকেই ৫ বছরের জন্য মেয়র পদে চাই। এসব হিসাব-নিকাশে এগিয়ে থাকবেন মেয়র টিটুই।

সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে এক সময় বন্ধ্যাত্ব ছিলো। সংস্কৃতিকর্মীদের ‘লাইফ লাইন’ অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে। আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই অডিটোরিয়ামের দৌলতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। সংস্কৃতির পাশাপাশি ময়মনসিংহের সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের প্রতি নজর রয়েছে এবং সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে যিনি ‘আমজনতার’ প্রতিনিধি হয়ে নগর উন্নয়নে দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন মেয়রই পছন্দ সংস্কৃতিকর্মীদের, এমনটি জানান ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল।

কালের আলো/এমএএএমকে