খালেদা জেলে, বিএনপি’র সেইসব নেতারা এখন কোথায়?

প্রকাশিতঃ 5:46 pm | February 09, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যাপক তৎপরতার মুখে ময়মনসিংহে প্রকাশ্যেই আসতে পারেনি বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। অথচ রায়ের আগে কতই না হাঁকডাক মেরেছিল এ দলটি। দলটির সিনিয়র নেতাদের রাজপথে এমন নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভের অনলে পুড়াচ্ছে তৃণমূল কর্মীদের।

খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে, আলোচিত এ দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দিনমান ময়মনসিংহে মাঠে সক্রিয় দেখা যায়নি বিএনপি’র অনেক শীর্ষ নেতাকেই। দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন থেকে শুরু করে নগর বিএনপি এমনকি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন পর্দার আড়ালে। দলীয় চেয়ারপার্সনের কঠিন বিপদের মুহুর্তে নুন্যতম শান্তিপূর্ণ কোন কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়নি তাদের।

তবে দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, ওইদিন বিকেলের দিকে নগরীতে মেজর পয়েন্টে শান্তিপূর্ণ একটি বিক্ষোভ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে বিএনপি’র দুই নেতাকে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ আলম ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য এনামুল হক আকন্দ লিটনের নেতৃত্বাধীন ওই বিক্ষোভ মিছিলটিই ছিল ময়মনসিংহ নগরীতে বিএনপি’র ‘স্বান্তনা’। ওই বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ ২৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। শুক্রবারও এ মিছিলকে ঘিরে দলীয় পরিমন্ডলে আলোচনা ছিল।

 

এ ঘটনার জের ধরে বিএনপি নেতা আলমগীর মাহমুদ আলমের বাসায় শুক্রবার দুপুরে নজিরবিহীন তল্লাশি চালায় পুলিশ। শহরের ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই ফারুকের নেতৃত্বে এ তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। একইভাবে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন আকন্দের বাসাতেও তল্লাশি চালায় পুলিশ।

দেখা গেছে, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র দীর্ঘদিনের সভাপতি ও সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন আত্নগোপন করলেও কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শুক্রবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের লড়াকু রাজনীতিক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) মোহাম্মদ আল আমিন ও কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে আটক করা হয়েছে নগর বিএনপি, যুবদলসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আরো ৮ নেতা-কর্মীকে।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ‘সিন্ডিকেট’র আলোচনায় অনেক দিন যাবতই উচ্চারিত হচ্ছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের সৎ ছোট ভাই ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাবলু ওরফে ক্লাসিক বাবলু’র নাম। সব সময় ঢাকামুখী এ নেতাকে কখনোই এলাকায় পাওয়া যায় না।

গত দু’দিনেও ময়মনসিংহে তাঁর কোন হদিস মেলেনি। আবার দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটিতে ঠিকই তিনি শীর্ষ পদে আসতে চান। দলীয় কর্মীদের প্রশ্ন, এমন নেতার হাতে দলের নেতৃত্ব গেলে ময়মনসিংহে আর বিএনপি’র অস্তিত্ব থাকবে না।

দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রোকনোজ্জামান সরকার রোকন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শহীদুল আমিন খসরু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম শামীম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবু সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক মফিদুল ইসলাম মোহনকেও কোন মিছিল বা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম আজাদ রেকর্ড মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন।

কিন্তু বাদ বাকী হাঁকডাক মারা নেতারা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছেন। আগামী দিনের দলীয় রাজনীতিতে এমন নেতারা পদ পদবীতে বহাল থাকলে তৃণমূল কর্মীরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। দলের সঙ্কটময় মুহুর্তে কৌশলে সটকে থাকা এসব নেতাদের হাতে দল নিরাপদ নয় বলেও মন্তব্য দলীয় একাধিক ক্ষুব্ধ কর্মীর।

সূত্র জানায়, একইভাবে মাঠে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ, ত্রিশাল উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন, ভালুকা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সদস্য শেরে বাংলার নাতনি জামাই আখতারুল আলম ফারুককেও।

তবে কেন্দ্রীয় এসব নেতাদের লজ্জা দিয়ে ঢাকায় বিএনপি নেতাদের তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গিয়ে আটক হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহ মো: শাহাবুল আলম।

একই অবস্থা ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের বেলাতেও। দলটির আহবায়ক সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। তবুও তিনি পদে বহাল। সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার বিএনপি চেয়ারপার্সনের রায়ের দিন বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তারাকান্দায় ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশে নেতৃত্ব দেন।

ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও দলীয় সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবির শাহীনকে গত দু’দিন রাজপথে দেখা যায়নি। তবে রায়ের দিন ঠিকই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় অবস্থান নেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু।

ওইদিন বিকেলে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের মাইজবাগ এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ সময় মিছিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ সোহাগি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নাসির উল্লাহ মেম্বারকে গ্রেফতার করে।

উত্তর জেলা বিএনপি’র আরেক যুগ্ম আহবায়ক লম্ফঝম্ফ করে বেড়ানো আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণকে আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেনকেও। তবে তাদের শুন্যস্থান পূরণ করেছেন উত্তর জেলা যুবদল ও ছাত্রদল।

রায়ের দিন বিকেলে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে যুবদল নেতা ভিপি শামছু, সৈয়দ তৌফিক, ছাত্রদল নেতা ঝুলন, মামুন, সোহেল ও ইলিয়াস আহত হন।

আরও পড়ুন: খালেদার সাজা হলেও নির্বাচনের পথেই হাঁটছে বিএনপি

কালের আলো/টিএম