লড়াইটা ‘নন্দিত নগর নেতা’ টিটুর একার না

প্রকাশিতঃ 5:25 pm | March 07, 2024

দেশের বারোতম সিটি করপোরেশন ময়মনসিংহ। দ্বিতীয়বারের মতো ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট আগামী ৯ মার্চ। এই নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার হচ্ছে জনপ্রত্যাশা। বিএনপি না এলেও এবারের ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এবং উৎসব মুখর। দলীয় ব্যানারে না হওয়ায় উন্মুক্ত ভোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াই। সদ্য বিদায়ী মেয়র ইকরামুল হক টিটুতেই কী আস্থা না কী নগরবাসী চান নতুন মুখ? এসব বিষয়কে সামনে রেখে চলছে জল্পনা। ভোট কেমন হবে, নতুন মেয়রের কাছে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব। ময়মনসিংহ মহানগরী ঘুরে এসে প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের জ্যেষ্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক রাইসুল ইসলাম খান অনিক

একটি নতুন সিটির গোড়াপত্তন হয়েছে ৫ বছর আগে। করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় কেটে গেছে প্রায় অর্ধেক সময়। নানা সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে সিটি করপোরেশনের সেবা পৌঁছে দেওয়া ছিল একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু চেষ্টা করেছেন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে। নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রথমেই সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করেছেন। অসম্ভবের পায়ে মাথা না কুটে সমস্যা সমাধানের পথ বের করেছেন। গ্রামীণ আবহের নতুন যুক্ত এলাকাগুলোতে মহানগরের অবয়ব লেগেছে পুরোদমে। নাগরিক সেবায় উত্তরণের ছাপ স্পষ্ট। অনেক প্রকল্প চলমান রয়েছে। কোন কোন প্রকল্প সুন্দর ভবিষ্যতের বার্তা বাহক। এগুলো বাস্তবায়নে মাত্র আড়াই বছর যথেষ্ট নয়। এজন্য সময় প্রয়োজন। খেদোক্তি সহজ কিন্তু কাজ করাটা কঠিন। টিটু সমানতালেই কাজ করেছেন। ভোটারদের হৃদয় মঞ্জিলে নিয়েছেন ঠাঁই।

অথচ স্বার্থসিদ্ধির নীলনকশা বাস্তবায়নে তৎপর একটি বিশেষ মহলের মুখে প্রশংসার বদলে মিথ্যার বেসাতি। অর্থাৎ ‘নন্দিত নগর নেতা’কে ‘ব্যাক ডোর পলিটিক্স’র মুখোমুখি করতে হীন অপপ্রয়াস! দলীয় বিরুদ্ধবাদীদের একটি ছোট্ট অংশ নানাভাবেই তার নেতিবাচক আলোচনা-সমালোচনায় মাঠ গরমে ইতোমধ্যেই পণ্ডশ্রম দিয়েছেন। কিন্তু বারো মাস মাঠ আঁকড়ে থাকা মেয়র টিটু সততার শক্তিতে, নৈতিক দৃঢ়তায় ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন হায়ারে খেলতে আসা হঠাৎ আবির্ভাব ঘটা কথিত জনদরদীদের!

মসিক মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর পক্ষে জনজোয়ারে ভেসে গেছে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। পছন্দের প্রার্থী নিয়ে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পেরে এখন উল্টো পর্দার অন্তরালে সুপারফিসিয়াল বাগাড়ম্বর দেখানো এক নেতা। তাঁর অনুসারীরাও গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত। যারপরেনাই বেকায়দায় অন্য দু’মেয়র প্রার্থী। না পারছেন টিটুর জনসংযোগের গতির সঙ্গে কুলাতে, না পারছেন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক বা সাধারণ মানুষের আনুকূল্যে মন ভরাতে। নিজেরাই একে অপরের মুণ্ডুপাতে ব্যস্ত! বড় নেতাও মেয়র ফেলে এখন ছক কষছেন কাউন্সিলরে। মাইনাসে মাইনাসে একাকার মুহুর্তে হেসে খেলে প্রতিপক্ষকে জনতার সমর্থনে আগামী ৯ মার্চ চূড়ান্ত ধরাশায়ী করতে এগিয়ে চলছে মেয়র প্রার্থী টিটু’র বিজয়রথ।

আলোকিত ঝলমলে, পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্মার্ট ময়মনসিংহ গড়তে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি নান্দনিক সড়কবাতিতে নগরীর সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন মসিকের সদ্য বিদায়ী মেয়র ইকরামুল হক টিটু। অন্ধকার তাড়িয়ে আলোর পথে যাত্রায় সিটির প্রতিটি এলাকাকেই দিয়েছেন নবরূপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের অদম্য অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ময়মনসিংহ সিটির নতুন-পুরাতন প্রতিটি ওয়ার্ডেই সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে দিন-রাত একাকার করে কাজ করেছেন অবিরাম; কুড়িয়েছেন প্রশংসাও।

খোলনলচে পাল্টে প্রতিনিয়ত বদলে দিয়েছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরীকে। বিরতিহীন নানামুখী কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে দেশের পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করেছেন ময়মনসিংহকে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন শহরের দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতির মতোই স্থানীয় এলাকাবাসী ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত সড়কবাতিতে আলোকময় করেছেন রাতের ময়মনসিংহ। কোন রঙ-তুলির আঁচড়ে নয় বাস্তবিক উন্নয়ন ম্যাজিকে অপরূপ ময়মনসিংহের চিত্রপট বদলে দেওয়ার কারিগর টিটু। ময়মনসিংহের নাগরিক জীবনে পরিবর্তনের সূচনা তাঁর হাত ধরেই। উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট সিটির রূপকার হিসেবে তিনিই এখানকার বাসিন্দাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিভূ।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে না পিছিয়ে যাবে ময়মনসিংহ এ বিষয়ে নাগরিক ভোটাররা ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন, ন্যায় বিচার, জবাবদিহিতা ও পরিকল্পিত নগরী উপহারে জনবান্ধব কাণ্ডারি ইকরামুল হক টিটুই। যানজট ও জলাবদ্ধতামুক্ত নগরীতে পরিণত করার লড়াইয়ে সব ষড়যন্ত্র নসাৎ করে এগিয়ে চলার প্রত্যয় প্রতীতিতে নগরবাসী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ, বলছিলেন ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম। তিনি বলেন, ‘যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে নগরীর প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে টেকসই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণে অভিজ্ঞ একজনই তিনি মেয়র টিটু।’

ভোট যুদ্ধে জয়ী হওয়ার লড়াই যে কেবল সাবেক মেয়র টিটুর একার নয় তাঁর বড় প্রমাণ তাঁর পক্ষে রাজনৈতিক সহকর্মী থেকে শুরু করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী উদ্যোক্তা, সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বত:স্ফূর্ত প্রচারণা। এটি ভোটের মাঠে তাঁর একক আধিপত্যের বার্তা বহন করছে। ময়মনসিংহের একটি প্রথম সারির দৈনিকের নিউজ এডিটর পদমর্যাদার একজন এসব বিষয় নিয়ে চূলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি জানান, ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর বেশিরভাগ নেতাকর্মী সাবেক মেয়র টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির ২৫ নেতা, উপদেষ্টা পরিষদের ৪ নেতা, মহানগর আওয়ামী লীগের ৪ সহসভাপতিসহ ২৬ নেতা, উপদেষ্টা পরিষদের ১১ নেতা কাজ করছেন। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগ, মহানগর ছাত্রলীগ, মহানগর যুবলীগের একটি বৃহৎ অংশ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কবি- সাহিত্যিক, শিল্পীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও উদ্যোক্তারাও নেমেছেন তাঁর প্রচারণায়।

সব নগরীর বাসিন্দাদের প্রত্যাশা থাকে একজন ফুলটাইম মেয়র। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের টিটুও স্মার্ট, যুগোপযোগী, উচ্চ শিক্ষিত, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ। সার্বক্ষণিক নগরবাসীর সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। এ প্রার্থীর ভোটের মাঠ সুসংহত বলে জানান নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মতিন। নগরীর আনন্দমোহন কলেজের শিক্ষার্থী ও নতুন ভোটার আবু সায়েম বলেন, ‘ভালো, সৎ ও নিষ্ঠাবান মেয়র হিসেবে টিটু ভাইয়ের বিকল্প নেই। ঘরে ঘরে তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে।’

‘অবিবেচক, দায়সারা বা দায়িত্বহীন কথাবার্তা কখনও বলেননি মেয়র টিটু। তিনি শিক্ষিত, বিচক্ষণ এবং বিতর্কিতমুক্ত। নাগরিক জীবনে শুভবোধের ঐকতানে বেঁধেছেন নিজেকে। গভীর প্রজ্ঞা আর জ্ঞান দিয়ে নগরকে বুঝেন। তার বিকল্প তিনিই’- বলেন নগরীর কমার্স কলেজের এক শিক্ষক।

ময়মনসিংহ নগরী ময়মনসিংহ জেলার মুখদর্পণ। এই নগরীর মেজাজ বুঝতে হলে এর নাগরিকদের বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে পরিমিতি, সারল্য, স্বপ্ন আর সফলভাবে কাজের বাস্তবায়ন ইকরামুল হক টিটুর নেতৃত্বের মূল সুর। তাঁর ইশতেহার ব্যক্তি, দল বা সময়কালের ঊর্ধ্বে সর্বজনীন। আগামী ৯ মার্চ তিনিই হবেন ‘স্মার্ট ময়মনসিংহ সিটির স্মার্ট মেয়র’- যোগ করেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম।

কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে