রমজানে বদলে যাওয়া জীবনধারা

প্রকাশিতঃ 4:12 pm | March 13, 2024

কালের আলো রিপোর্ট :

শান্তি-সম্প্রীতির অমিয় বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারো এসেছে মাহে রমজান। বরকত আর পুণ্য লাভের এ মহিমায় মাসের প্রথম দিনেই বদলে গেছে রাজধানীর মানুষের নিত্যদিনের জীবনধারা। গোটা নগরীতেই পবিত্র মাসের ছোঁয়া লেগেছে। রোজাদাররা পানাহার থেকে বিরত থেকে প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন অফুরন্ত রহমতের মাসের তাৎপর্য।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি অফিস-আদালতেও মহিমান্বিত মাসের প্রভাব পড়েছে। ক’দিন আগেই নির্ধারিত হয়েছে নতুন সময়সূচি। রাজধানীর পাড়ার দোকান থেকে শুরু করে আধুনিক রেস্টুরেন্টেও জমজমাট ইফতারের আয়োজন হয়েছে। ক্লান্ত শরীরে নতুন নির্ধারিত সময়ে বাড়ি ফেরার সময়েই এসব ইফতার সামগ্রির দোকানগুলোতে ভিড় করেন। আবার প্রথম রমজান হওয়ায় ভিড় সামলাতেও হিমশিম খেতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরের পর পরই পুরান ঢাকার চকবাজার, রাজধানীর গুলশান, বনানী, মিরপুর, মতিঝিলসহ প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই তুমুল ব্যস্ততা চোখে পড়ে। বাহারি রঙ ও স্বাদের ইফতারি আইটেমের খোঁজে নাগরিক জীবনের এই ব্যস্ততা দাঁড়ি টানে মাগরিবের আজানের খানিক সময় আগেই। গোটা রমজানজুড়েই নগরীর এসব ইফতারি সামগ্রীর দোকানগুলো থাকবে উৎসবের কেন্দ্র হিসেবে।

এসব ইফতারের দোকানের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল ১১ টা থেকেই প্রতিটি দোকানে দোকানে শুরু হয়ে গেছে ইফতারির প্রস্তুতি। ওই সময়ই ভাজা শুরু হয় পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনির মতো আইটেমগুলো। আর সর্বত্রই মিলছে সাধারণ ছোলা-মুড়ি, পেঁয়াজু, খেজুর, জিলাপি, বেগুনি এবং আলুর চপ। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিকেল থেকেই হাঁক দেওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। মাগরিবের আজানের আগেই নগরীর দোকানগুলোতে ফুরিয়ে যায় ইফতার সামগ্রী।

ঢাকার ইফতারে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের নাম। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রথম রমজানেই নানা পদ আর স্বাদের ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা।

প্রচলিত ইফতারের পাশাপাশি স্থান পায় ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার। বাহারি খাবারের স্বাদ নিতে দুপুর থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে চকবাজারে ছুটে আসতে শুরু করেন রোজাদাররা। ঐতিহ্যবাহী ইফতার কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান ভোজনবিলাসী বাঙালি। তারা বলেন, ইফতারের যত ধরনের আইটেম আছে, এখানে সবই পাওয়া যায়। তাই ইফতার নিতে এখানে এসেছি।

চকবাজারের ইফতারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নিয়ে ক্রেতার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। ইফতারের বাজার এবার চিরচেনা রূপ ফিরে পাওয়ায় সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, বংশ পরম্পরায় আমরা এখানে ব্যবসা করে আসছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর রোজায় দোকানদারি করতে পারিনি। এবার করতে পারছি। ভালোই ক্রেতা আসছে।

চকবাজারের পাশাপাশি পুরো রাজধানী জুড়েই ছিল ইফতারের বাহারি আয়োজনের পসরা। এছাড়া প্রথম রমজান হওয়ায় অনেকেই আবার বাড়িতে নিজেরাই ইফতার সামগ্রী তৈরি করেন। তবে ইফতারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ জিলাপি কিনতে ঠিকই তাদের ছুটতে হচ্ছে দোকানে। ইফতারে মুখে স্বাদ আনতে অতুলনীয় স্পেশাল হালিম। নগরীর ইফতারের দোকানে ১৬০ থেকে ৩২০ টাকা পাতিলে বিক্রি হয়েছে খাবারের এই পদটি। নগরীর নানা প্রান্ত থেকেই লোকজন ভিড় জমান এ হালিমের স্বাদ নিতে।

ইফতারে ভাজাপোড়ার পাশাপাশি পানীয় ও ফলের দোকানেও জমজমাট পরিবেশ। সকাল থেকে বিকেল অসহনীয় তাপদাহের সন্ধ্যার ইফতারে ডাবের পানিতে তৃষ্ণা নিবারণ করতে আগেভাগেই ছুটোছুটিও দেখা গেছে। এ সময় কদর বেড়েছে তরমুজের। প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তরমুজ। নগরীর কয়েকটি স্পটে ছোট আকারের ডাব ৮০ টাকা এবং বড় আকারের ডাব ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

কালের আলো/বিএসবি/এমএ