সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন মনিটরিং, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর মহত্ত্বে নেটাগরিকদের প্রশংসা
প্রকাশিতঃ 10:26 pm | March 14, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সাপ্লাই চেইন মনিটরিং ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্যের সরবরাহ চেইন কার্যকরভাবে মনিটরিং করতে এবার এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রযুক্তির সহায়তায় সফটওয়্যারের মাধ্যমে আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) থেকে সাপ্লাই চেইন মনিটর করার এ উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন সুসংবাদ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাপ্লাই চেইন মনিটরিং সিস্টেম শক্তিশালী করছে। আমরা একটি সফটওয়্যার ডেভেলপের চেষ্টা করছি, যাতে সাপ্লাই চেইন মনিটর করতে পারি। আগামীকাল (শুক্রবার) এর উদ্বোধন হবে।’
স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে শুরু থেকেই নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন সরকারের নতুন এ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। কীভাবে বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের অস্থিরতা ঠেকানো যায় ইত্যাকার বিষয়াদি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বাজারে পণ্যের সরবরাহে সংকট তৈরি যেন না হয় সেদিকেও নজর রাখছেন। বাজার ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলার ভেতর আনতে নিয়মিত বাজারে ছুটছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে রক্ষা করছেন যোগাযোগ। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বাজারে সাপ্লাই চেইন মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করতে গুরুত্বারোপ করেছিলেন।
অবশেষে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আহসানুল ইসলাম টিটু কার্যকরী ও ফলদায়ক এ পরিকল্পনার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনাটি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছেন। এটি ক্রয়, উৎপাদন, বিতরণ সম্পর্কিত সকল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে যোগদানকারী, উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা থেকে সর্বশেষ ক্রেতাদের একত্রীকরণ ও সহযোগিতা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সাপ্লাই চেইনের মনিটরিংয়ে সফটওয়্যার কার্যক্রমের সুফল তুলে ধরে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাপ্লাই চেইন মনিটরিং’র মাধ্যমে কোথা থেকে কীভাবে পণ্য যাচ্ছে, কৃষক বেগুনের দাম পাচ্ছে ১০ টাকা। সেটি ঢাকায় এসে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলো জানা সম্ভব হবে।’ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কথাও জানান তিনি।
আলোচনায় বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর তৎপরতা
সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তবুও বাজারে কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা ওঠেছে। বাজারে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টি তদারকি করার পাশাপাশি কেউ কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটিতেও বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর তৎপরতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন ছিল- দায়িত্ব নেওয়ার (বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী) প্রথম দিন থেকে আপনি কথা বলছেন, আপনি এখন বাজারেও যাচ্ছেন। আপনি যে পরিমাণ শ্রম দিচ্ছেন, বাজারে কেন সে রকম প্রভাব পড়ছে না; খুচরা বাজার কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি সাপ্লাই চেইনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আবার আক্ষেপও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাপ্লাই চেইন নিয়ে কথা বলি; এটা তো একটা ট্রলের ব্যাপার হয়ে গেছে। যেখানে যেখানে আমাদের সাপোর্ট দরকার; কৃষকের কাছ থেকে ট্রাকে উঠে এসে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে যাওয়া পর্যন্ত—এই জায়গাটা আমরা এখন পর্যন্ত সিমপ্লিফাই করতে পারছি না।
‘আপনারা সাপ্লাই চেইন ফলো করেন, তাহলে বুঝবেন আমার ফেইলিয়র বা শতভাগ সার্থক না হওয়ার কারণটা কী। শসা, লেবু, বেগুন উৎস থেকে কত টাকায় ট্রাকে উঠছে এবং হাত ঘুরে কাঁচাবাজারে কত টাকায় ল্যান্ড করছে নিউজ করেন। তাহলে আমার সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারবেন, কেন আমি শতভাগ সফলতা আনতে পারছি না’-যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কৃষিপণ্য অধিদপ্তর আমার মন্ত্রণালয়ে না, আরেকটি মন্ত্রণালয়ের, যারা এটির দাম ঠিক করে দেওয়ার কথা, যারা এটির পরিবহন ঠিক করে দেওয়ার কথা এবং ঢাকায় এনে আমার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা, তারপর আমি পাব। কিন্তু বাকি পরিবহন ব্যবস্থাটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে না। আমি দোষ চাপানোর জন্য এটি বলছি না। তাদের সাথে আমরা কাজ করছি। এটি অনেকদিন শক্তিশালী ছিল না, সেটি শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করছি। তাদের এই ক্যাপাসিটি ছিল না।’
ঢাকার প্রত্যেকটা হোলসেল মার্কেট সরকারের নজরদারিতে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাইকারি বিক্রেতাদের একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। তারা যেন ভাউচারগুলো দেয় যে, কত দামে তারা রিটেইলারের কাছে বা খুচরা বিক্রেতার কাছে দিল। আমরা যখন যাই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এটি পাই না। কারণ তারা পাইকারি বাজারের আড়তদার থেকে নয়, পাইকারি বাজারের রাস্তা থেকে কিনছে। সেটাই আমি হাইলাইট করার চেষ্টা করেছিলাম। এগুলো অনুশাসনের মধ্যে আনতে হবে।’
কাঁচাবাজারের চেয়ে ফিক্সড প্রাইজ শপে দাম কম
কাঁচাবাজারের চেয়ে ফিক্সড প্রাইজ শপগুলোতে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা। ফিক্সড প্রাইজের যে দোকানগুলো থাকে, সেখানে পণ্যের দামটা লেখা থাকে। কাঁচাবাজারে গেলে যেহেতু দামাদামি করে, যে দামটা চায় সেটিই প্রচার হচ্ছে। কিন্তু যে দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি প্রচার হচ্ছে না।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সুপারশপের অন্যান্য ইনসেনটিভগুলো নেন তাহলে প্রত্যেকটা রোজার পণ্য সুপারশপগুলোতে ফিক্সড প্রাইজ। সুপারশপ বলব না, ফিক্সড প্রাইজ শপগুলোতে দাম তুলনামূলক কাঁচাবাজারগুলোর চেয়ে কম।’
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। আমাদের নিয়ন্ত্রণে যে উদ্যোগগুলো, সেগুলো নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করছে। আমার নিজের কাছেও অবাক লেগেছে, যারা মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত তাদের জন্য সুপারমার্কেট। কিন্তু সুপারমার্কেট অ্যাসোসিয়েশন আমাকে একটি চিঠি দিয়েছে, রোজার মধ্যে কোন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কত কমে বিক্রি করবে। এটা একটি উদাহরণ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যম) বলব, পণ্যের দাম সেটি হাইলাইট করতে, যেখানে পণ্যের দাম ফিক্সড করে দেওয়া আছে। মানুষের মুখের প্রাইজটা না নিয়ে যেটা ট্যাগে লাগানো আছে, সুপারমার্কেটে যেগুলো থাকে, সেটি হাইলাইট করলে মানুষও জানবে সুপারমার্কেটে তো এইটা, তাহলে কাঁচাবাজারে গিয়ে কেন এটা কিনব? সুপার মার্কেটে যদি ২৯ টাকায় আলু থাকে তাহলে কেন আমি ৩৫ টাকায় দামাদামি করব। অনেকে মনে করে দামাদামি করলে হয়ত দুই টাকা সাশ্রয়ী হবে, সে জন্যই মানুষ কাঁচাবাজারে যায়।’
সুপারশপ থেকে মানুষকে পণ্য কেনার উৎসাহ দিলেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মানুষকে ফিক্সড প্রাইজে, যেখানে স্বল্পমূল্যে পণ্য পাওয়া যায়, যেখানে সুবিধাজনক পাওয়া যায়, সেখান থেকে কিনতে বলছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন বলল বেগুনের দাম ১০০ টাকার উপরে, কিন্তু ওই বেগুনের দামটাই যেখানে এসিতে বেশি থাকার কথা, সেটি কিন্তু কম। বেগুন বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন যে, ভিতরে যদি ৯০ টাকা হয় তোমার এখানে বেশি কেন? আমি কাউকে প্রমোট করছি না। আমি ভোক্তাদের যেন সহজ হয়, কম দামে যেখানে জিনিস পাওয়া যায়, সেটাই রেফার করার চেষ্টা করেছি।’
প্রতিমন্ত্রীর প্রশংসায় নেটাগরিকরা
খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘নিম্নমানের খেজুর’ উল্লেখ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘নিম্নমানের খেজুর’ এর নাম সংশোধন করে ‘সাধারণ মানের খেজুর’ করে নতুন চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। এই ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এই এ ধরনের ভুল হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত এটি সংশোধন করেছি। তিনি অনিচ্ছাকৃত এধরনের ভুলকে হাইলাইট না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান।’
সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী হয়েও ভুলের জন্য এমন ক্ষমা চাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আহসানুল ইসলাম টিটু’র প্রশংসা করেছেন অনেকেই। কাজী এনাম নামে একজন লিখেছেন, ‘মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয় আর এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া মহত্ত্বের লক্ষণ। অনেক নেতারা ক্ষমা চাওয়া শব্দটি নিজেদের অভিধান থেকে মুছে ফেলেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম এ প্রতিমন্ত্রী। মহত্তম এ গুণের জন্য তাকে অভিনন্দন জানাই।’ শেষে তিনি লিখেন, ‘আপনার এই মহত্ত্ব বজায় রাখলে সত্যিকারের মন্ত্রী এবং মানুষের নেতার আসন অলংকৃত করে রাখা আপনার জন্য সম্ভব হবে।’
কালের আলো/এমএএএমকে