হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা; গুলশানের বাড়ি সালাম মূর্শেদীরই থাকছে
প্রকাশিতঃ 8:14 pm | March 24, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও দেশসেরা সাবেক নন্দিত ফুটবলার আব্দুস সালাম মূর্শেদীর গুলশানের বাড়ি তিন মাসের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আট সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছে চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে তাঁর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৪ মার্চ) চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের ওপর আপিল বিভাগের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ স্থিতাবস্থা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সালাম মূর্শেদীর আইনজীবী জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
রোববার (২৪ মার্চ) চেম্বার গণমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে তিনি আরও জানান, এর ফলে সালাম মূর্শেদীর বাড়ি এখন যেভাবে আছে সেই অবস্থাতেই থাকবে। আদালতে তিনি ছাড়াও সালাম মূর্শেদীর পক্ষে আরও শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সাঈদ আবদুল্লাহ আল মামুন খান ও অ্যাডভোকেট ড. তানজির মান্নান। আর রিট পিটিশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
বাসার প্রকৃত ও সঠিক স্বত্ত্বাধিকারী সালাম মূর্শেদী
সালাম মূর্শেদীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘আব্দুস সালাম মূর্শেদীর গুলশানের বাসাকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে কেন ডিক্লেয়ার করবে না সেই মর্মে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেই রুলের প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে মহামান্য হাইকোর্ট বাসাটির স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে তিন মাসের মধ্যে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়কে হ্যান্ডওভার করার আদেশ দিয়েছিলেন। পরে হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন সালাম মুর্শেদী। আমরা রায় ও হ্যান্ডওভারের ফরমাল আদেশ আসার আগেই আপিলেট বিভাগে আপিল দায়ের করি। আপিল বিভাগ আমাদের দু’পক্ষের শুনানি শুনে আমাদের এই বাসায় হোল্ডিংয়ের স্থিতিবস্থার আদেশ দেয়। এই আদেশের ফলে এই বাসার প্রকৃত ও সঠিক স্বত্ত্বাধিকারী সালাম মূর্শেদীকে তাঁর এই বাসাটিকে আদেশ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হ্যান্ডওভার করতে হচ্ছে না।’
আমরা গতবার রায়টিকে ‘বিরল’ বলে ডিক্লেয়ার করি
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই সুনির্দিষ্ট রায়ের বিপক্ষে আপিলে মহামান্য আপিলেট ডিভিশনে আমরা যে বক্তব্য তুলে ধরেছি, এই সম্পত্তিকে কীভাবে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ডিক্লেয়ার করা হয় সেই বিষয়ে একটি যুগান্তকারী রায় রয়েছে। সেই রায়টি গত বছর মহামান্য আপিলেট ডিভিশন থেকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এবান্ডান্ট প্রোপার্টি-এই প্রোপার্টি কীভাবে এবান্ডান্ট ঘোষণা ও রিলিজ করা যায় সেই বিষয়ে আপিলেট ডিভিশন ও হাইকোর্ট ডিভিশনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা রয়েছে।’
এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিক আবেদ খানের বাড়ির মামলার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত বা বাড়ির মালিক তাঁর কথা না শুনে কিংবা ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাই না করে এই আদালত বিতর্কিত রায় দিতে পারে না।’ অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা আরও বলেন, ‘ওই রায়ে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ একসঙ্গে বলে দেয় যারা এই পার্টিকুলার প্রোপার্টির প্রিভিসেসারস’র তাদের না শুনে এবং তাদের ডকুমেন্ট না এক্সামিন করে হাইকোর্ট ডিভিশন ট্রাইব্যুনাল এবং বিচারিক আদালত কোন রায় দিতে পারে না। এজন্য আমরা গতবার এই রায়টিকে ‘বিরল’ বলে ডিক্লেয়ার করি।’ উচ্চ আদালতের কোন সিদ্ধান্ত আলোকপাত না করে হাইকোর্ট ডিভিশন একটি জনস্বার্থের মামলায় প্রথমবারের মতোন এটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ডিক্লেয়ার করে। আমাদের রায় পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এই সময় পর্যন্ত আমাদের স্থিতিবস্থা থাকবে। একবার যেহেতু আমরা স্থিতিবস্থার আদেশ পেয়ে গেছি সেই আদেশ আপিল বিভাগের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ চলমান থাকবে।’
গণমাধ্যমের প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব
আদেশ ৮ সপ্তাহের জন্য দিয়েছে, সেখানে কীভাবে আপনি আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত দাাবি করছেন, এই প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘আপিল বিভাগে যেকোন অর্ডার আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অনটাইমের এক্সটেনশনের দরখাস্ত দিয়ে দেওয়া হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্ডার অটো এক্সটেনশন হতে থাকে। এটির ওপর রেজিষ্টারের অর্ডার আছে এবং কোর্টের এই প্রসিজিয়ারটি ৫২ থেকে ৫৩ বছর যাবত ফলো করে আসছে।’
রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি, রায় পাওয়ার ৯০ দিন, এতো তাড়াহুড়া কী ছিল আপনাদের? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন তাড়াহুড়া নয়। আপনি দেখবেন রাইট টু প্রপার্টি ইজ এ সাংবিধানিক রাইট। কোন সাংবিধানিক রাইট আপনি এক সেকেন্ডের জন্য আনগাইডেড রাখতে পারেন না। গত বুধবার ওনি যখন রায়টি দেন তখন প্রপার্টি আমার। ওনি রায় দিয়ে বললেন, সরকারের একটি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিতে। আমার রাইট টু প্রপার্টি সেটিকে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী অন্যের হাতে ট্রান্সফার করে দিতে বলেছে। সেহেতু রাইট টু প্রপার্টি, রাইট টু বিজনেস, রাইট টু পাবলিক এসোসিয়েশন, রাইট টু সাংবিধানিক পোস্ট এগুলো এক সেকেন্ডের জন্য খালি রাখা যায় না।’
ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষের আইনজীবী বলছেন, এই রায় বেরই হয়নি, ৯০ দিনও হয়নি। শুধু শুধু চেম্বার আদালতে গেছেন আপনারা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন ল ইয়ার ফান্ডামেটালে ভুল করে তাহলে কী বলা? আমি বলেছি, সাংবিধানিক অধিকার, সাংবিধানিক পোস্ট। করোনার সময় যখন ভার্চুয়াল কোর্ট করা হয় তখন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মাহমুদ হোসেন স্যার বলেছিলেন, সাংবিধানিক কোর্ট এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না।’ সাংবিধানিক কোর্ট, ফান্ডামেন্টাল রাইটস এবং রাইট টু প্রপার্টি কারও এক সেকেন্ড’র জন্য এদিক সেদিক যেতে পারে না। যখনই অর্ডার হয়ে যায় তখন এটি ইজ আন্ডার অ্যা পার্টিকুলার চ্যালেঞ্জ। আমরা এই পার্টিকুলার চ্যালেঞ্জকে আমরা মিস অ্যাপ্লিকেশনে এবং মিস আপিলে আমরা স্থিতিবস্থা পেয়েছি। এটির প্রয়োজনীয়তা না থাকলে মহামান্য আপিলেট ডিভিশন, মহামান্য ভেকেশন বেঞ্চ পারমফরমিং দ্য পাওয়ার অব অ্যা ফুল কোর্ট ওনি কীভাবে এই অর্ডারটি দেন? একটি আইনজীবীর কথায় কী এটি টার্নড ডাউন হয়ে যাবে না কী? আদালতের অর্ডার শিরোধার্য সবার জন্য’- যোগ করেন সালাম মূর্শেদীর আইনজীবী জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
প্রসঙ্গত, খুলনা-৪ আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদী দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। সুনামের সঙ্গে তিনি দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন। রাজউকের নিয়ম অনুসরণ করে তিনি বাড়িটি কিনে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। এছাড়া সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও ট্যাক্স প্রদান করে আসছেন। কিন্তু বৈধ বাড়িটিকে ঘিরে তাকে বারবার হেনস্থার অপকৌশল দৃশ্যমান হয়েছে।
কালের আলো/এমএইচইউআর