উপজেলার প্রথম ধাপের ভোট আজ, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন উপহার দিতে চান সিইসি

প্রকাশিতঃ 12:31 am | May 08, 2024

রাইসুল ইসলাম খান/আব্দুল হামিদ, কালের আলো:

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ বুধবার (৮ মে)। এ ধাপে ১৩৮ উপজেলার ২২টিতে ইভিএম এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট হবে। ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার (০৭ মে) সরিষাবাড়ি ও নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে অন্যান্য উপজেলায় এরই মধ্যে ভোট কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রভাবমুক্ত নির্বাচন উপহারে কমিশনের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা নির্বাচনের ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে।

মঙ্গলবার (০৭ মে) দুপুরে নির্বাচন কমিশন জানায়, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে মোট ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ করে অর্থাৎ মোট ২৮জন প্রার্থী ইতিমধ্যে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ উপজেলার তিন পদে সকলে নির্বাচিত হয়েছে। তাই ওই পাঁচ উপজেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না। উপজেলাগুলো হলো- নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলা, ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলা ও মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা। এ পাঁচটি উপজেলার সব পদের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

সাধারণ কেন্দ্রে ১৭, দুর্গম এলাকায় ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ও সাধারণ কেন্দ্রে বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইসি। সেই হিসেবে সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ বা ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ বা ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন।

উপকূলীয় এলাকার দ্বীপাঞ্চলে কোস্টগার্ড, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোটারদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোট গ্রহণের আগের দুই দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোট গ্রহণের পরের দুইদিন মোট পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবেন। ভোটারের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছেন ১৪ হাজার ৬১০ জন বিজিবি সদস্য, ৪১ হাজার ৫৩০ জন পুলিশ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ও পুলিশের ১১ হাজার ৮৮৩ জন ভ্রাম্যমাণ টিম রয়েছে। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স ও অন্যান্য দায়িত্বে রয়েছে পুলিশের ২৯ হাজার ২২০ জন সদস্য। অন্যদিকে র‌্যাবের ২ হাজার ৬৪৮ জন ও আনসারের ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ৪০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। আর বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন ১৩৯ জন।

পৌঁছেছে ভোটের সরঞ্জাম, ব্যালট সকালে
মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল থেকেই বিভিন্ন নির্বাচন অফিস থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়। দুপুরের মধ্যেই তা পৌঁছে যায়। তবে বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে আজ বুধবার (০৮ মে) অর্থাৎ ভোটের দিন সকালে।

গতকাল সকাল থেকেই বরিশালের বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয় ভোটের সরঞ্জাম। সদর উপজেলা চত্বর থেকে ৬৮টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার বাদে বাকি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আমীর খসরু গাজী।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার ভোট হচ্ছে প্রথম ধাপে। সেখানেও ব্যালট পেপার বাদে বাকি সব সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে দুপুরের ভেতর পাঁচটি ইউনিয়নে ভোটের সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।

প্রভাবমুক্ত নির্বাচন উপহার দিতে চান সিইসি
প্রভাবমুক্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপহার দিতে চান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা নির্বাচনের ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেছেন, ‘নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে সেটাই বড় কথা। কোনো দল এলো কি এলো না, সেটা বড় কথা নয়। জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয় সে ব্যাপারে কমিশন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভোটে কেউ যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে ইসির অবস্থান স্পষ্ট। প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা। ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশকারীরা যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। উৎসাহ-উদ্দীপনা থেকে ভোটের মাঠে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের।’

সিইসি বলেন, ‘এটা নিয়মরক্ষার ভোট নয়, নির্বাচন অনিবার্যভাবে প্রয়োজন। আমাদের কাজ নির্বাচন আয়োজন করা, কে কোন দলের প্রার্থী এটা কোনো বিষয় না।’ এমপি-মন্ত্রীদের ভোটে প্রভাব বিস্তার প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা কোনো বেকায়দায় নেই। নির্বাচন অবাধ হবে। নির্বাচন প্রভাবিত করতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে মোতায়েন করা সম্ভব হবে। প্রার্থী ও প্রার্থীদের কর্মীদের নির্বাচনে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। গণমাধ্যমের মাধ্যমেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের চিত্র দেখা গেলে কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান সিইসি।

ভোটের একদিন আগে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
প্রথম ধাপে আজ ৮ মে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু মাত্র একদিন আগে গতকাল মঙ্গলবার (৭ মে) এ উপজেলায় সব পদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। সোমবার রাত ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালক-২ এর উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৮ মে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ছালেহা বেগম তার মনোনয়ন পত্রটি বৈধ করার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পরে হাইকোর্ট তার মনোনয়ন পত্রটি বৈধ ঘোষণা করে ২৫ এপ্রিল তাকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য নির্দেশ দেন। মহামান্য হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে ইসি। আপিলে তার মনোনয়ন পত্রটির বিষয়ে সোমবার (৬ মে) নো অর্ডার প্রদান করেন আপিল বিভাগ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই আদেশের নিমিত্তে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সব পদের নির্বাচন স্থগিত করা হলো।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান বলেন, ‘নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত হওয়ার চিঠি মেইলে পাওয়া গেছে। পরে রাত ১১টার দিকে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।’

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
গত মঙ্গলবার (৭ মে) জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন। বিকেল ৫টার দিকে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে জামালপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে জামালপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, ৮ মে নির্ধারিত জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক স্থগিত করা হলো। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পরবর্তী করণীয় জানানো হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে ৮ মে অনুষ্ঠেয় জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ১৮ এবং ৩১ এর বিধান লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে। মো. রফিকুল ইসলাম তার প্রার্থিতা বহালের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর ৫৩০৩/২০২৪ দায়ের করলে হাইকোর্ট বিভাগ ৬ মে তার প্রার্থিতা বহালের আদেশ দেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল বিভাগে সিএমপি নম্বর ৩৭৮/ ২০২৪ দায়ের করলে ৭ মের আদেশে ‘No Order’ দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের সব পদের নির্বাচন স্থগিত রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্ণিত অবস্থায় উল্লিখিত সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

কালের আলো/আরআই/এমকে