সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের মিশনে আসছেন ডোনাল্ড লু
প্রকাশিতঃ 11:42 pm | May 13, 2024
কালের আলো রিপোর্ট :
দুই দিনের সফরে আজ মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকা আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। নতুন করে তার ঢাকা আগমনের পেছনে ঢাকা ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তার মূল আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন তিনি বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
- জোরদার হবে ঢাকা ওয়াশিংটন সম্পর্ক
- আলোচনা হবে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি নিয়ে
- উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে না বিএনপি
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর মার্কিন সরকারের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ঢাকা সফর করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লুবাখার ঢাকা সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার তার সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসেন। এছাড়া এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন টিকফা বৈঠকের জন্য ঢাকা সফর করেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল—জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। তারা ইতোমধ্যে আমাদের জানিয়েছে—তাদের ঢাকা দূতাবাসে জলবায়ু ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা পাঠাতে চায়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। কারণ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতেও কর্মকর্তা পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।’
অপরদিকে, সোমবার (১৩ মে) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফর নিয়ে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চিঠি দিয়ে এ সম্পর্ককে যে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার কথা বলেছেন, মার্কিন প্রশাসনের যেই আসুন—সেই ধারাবাহিকতাতেই আলোচনা হবে।’ এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি সহজীকরণ এবং র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব নিয়েও আলোচনা হবে।’ সরকারের অন্যতম নীতি নির্ধারক এ মন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি নিয়ে আলোচনাই হবে মূল উপজীব্য। খোলাসা করে ড.হাছান বলেছেন, ‘সেগুলো (র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি) যেন সহজীকরণ হয় বা উঠে যায় তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনে এরই মধ্যে হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় এ প্রসঙ্গগুলো স্বাভাবিকভাবে আসতেই পারে। আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছি।’
নতুন সরকারের শুরুতে ডোনাল্ড লু’র সফরকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- এটা কি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের মিশন? উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর লুর প্রথম সফর হবে এটা। তার আসার সেটাই উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই। নির্বাচনের আগে যে চিত্র ছিল এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। স্থিতিশীল একটি সরকার। সরকার রেগুলার কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং সব দেশ এখন আমাদের সঙ্গে এনগেজড হতে চায়।’
লু’র এবারের সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তিনি আসবেন। বিএনপি মনে করেছে, আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেবে কি না। এই ধরনের উদ্ভট চিন্তা করছে। এ রকম উদ্ভট চিন্তা তারা আগেও করেছিল।’
বিএনপি’র মোহভঙ্গে ফখরুলের বয়ান
গত বছর ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর ছিল আলোচনার শীর্ষে। তার এবং ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নানা পদক্ষেপ ও দৌড়াদৌড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের কর্মকাণ্ড ছিল ‘অযাচিত’। শেষমেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়ে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। ভোটে অংশ না নিয়ে বিদেশিদের কাছে বারবার ধরর্না দিয়ে কোনো কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। এজন্য লু’র ঢাকা সফর নিয়ে প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছেনা বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, নির্বাচনের দেশের জনগণের চেয়ে বিদেশিদের কাছেই বেশি গেছে বিএনপি। কারণ জনগণের মাঝে তাদের ভিত্তি নেই। বিএনপি বিভিন্ন দূতাবাসে রাত-বিরাতে ধর্না দিয়েছে। কিন্তু দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হওয়া এবং বর্তমান সরকারের সাথে কাজ করার ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির মোহভঙ্গ হয়েছে। তাই প্রকাশ্যে লু’র সফর নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে না বিএনপির নেতারা।
সুর পাল্টেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের ভাবখানা এমন এ সফর একেবারেই আমলে দিতে চায় না। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কে আসলো আর কে গেলো তা নিয়ে মাথাঘামানোর সময় নেই। তিনি বলছেন তার দলের প্রধান শক্তি হলো জনগণ।’
কী বলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের কারণ জানায়। গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক বিবৃতিতে জানানো হয়- ডোনাল্ড লু ১০-১৫ মে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফর করবেন। তার সফর প্রতিটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং মুক্ত-উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য মার্কিন সমর্থনের কথা প্রদর্শন করবে।
এতে আরও বলা হয়, প্রথমে ভারতের চেন্নাই সফর করবেন, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে কনস্যুলেট কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন।
এরপর তিনি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে কলম্বো সফর করবেন। সেখানে তিনি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পাশাপাশি একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু ঢাকা হয়ে তার সফর শেষ করবেন। সেখানে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য বাংলাদেশিদের সাথে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরকরণসহ মার্কিন-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন।
কালের আলো/এমএএএমকে