লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের হাতেই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের ভার

প্রকাশিতঃ 4:41 pm | June 11, 2024

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

নিজের ৩৯ বছরের বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের দ্বারপ্রান্তে এসে এবার সর্বোচ্চ পদেই অধিষ্ঠিত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমান চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের ভার তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি হয়েছেন দেশের ১৮তম সেনাবাহিনী প্রধান। মঙ্গলবার (১১ জুন) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা, দক্ষতা, পেশারিত্ব, সাহস ও সততায় নিজেকে একটি ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। নিজ বাহিনীর কল্যাণকেই নিজের সামগ্রিক সত্ত্বায় ধারণ করেছিলেন। বিশাল কর্মময় জীবনে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও আদর্শবাদিতা ও কর্তব্যপরায়ণতায় অটল-অনড় থেকে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নতুন এ সেনাপ্রধান।

এর আগে মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ওয়াকার-উজ-জামানকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। আগামী ২৩ জুন থেকে তিন বছরের জন্য তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ২৩ জুন (২০২৪) থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা) আইন, ২০১৮ অনুসারে ওই দিন অপরাহ্ণ থেকে তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পরতে পরতে অজস্র আলোকরেখা
১৯৮৫ সালে সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ১৩তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া ওয়াকার-উজ-জামান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেনা সদর দপ্তরের সামরিক সচিবের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন নবম পদাতিক ডিভিশনকে। সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ৩৯ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং পদাতিক ডিভিশনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য সামরিক জীবন কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তিনি ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ৮ জুন পর্যন্ত ১৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর উপ-অধিনায়ক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহ দমনে নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১১ সালের ২৭ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দুই বছরেরও বেশি সময় ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন বছর অতি গুরুত্বপূর্ণ নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে টানা তিন বছর ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের বিজয় দিবস প্যারেড এর প্যারেড কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন করেন। এই বিরল কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘সেনাগৌরব পদক’ (এসজিপি) এ ভূষিত হন।

স্টাফ হিসেবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত একটি ব্রিগেড, স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিকস (এসআইএন্ডটি) এবং সেনাসদরে বিভিন্ন পদবী ও নিয়োগে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে জেসিও এনসিও একাডেমি (জেএনএ), স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিকস ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস সাপোর্ট এন্ড ট্রেনিং (বিপসট) এ অত্যন্ত সুনামের সাথে সকল পদবীর দেশী-বিদেশী সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

চলতি বছরের শুরুতেই সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) হিসেবে নিয়োগ পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) হিসেবে ৩ বছর ১ মাস সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৩৯ বছরের চাকরি জীবনে বিচক্ষণ নেতৃত্বে অর্জন করেছেন সুনাম। তিনি মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ ও যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

এছাড়াও তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ’ এবং যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ‘মাস্টার্স অব আর্টস’- ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ডিগ্রী অর্জন করেন। অ্যাঙ্গোলা ও লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সিনিয়র অপারেশন অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এই উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীতে তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ‘অসামান্য সেবা পদক’ (ওএসপি) এ ভূষিত হন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে দেশে ও বিদেশে একাধিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন। উজ্জ্বল করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এবং সারাহনাজ কমলিকা জামান দুই কন্যা সন্তান সামিহা রাইসা জামান ও শাইরা ইবনাত জামান এর গর্বিত জনক-জননী। ওয়াকার-উজ-জামান একজন সজ্জন, ক্রীড়ামোদি ও প্রাণবন্ত অফিসার হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত।

সততা ও পেশাদারিত্বের পুরস্কার
জ্যেষ্ঠতা থেকে শুরু করে যোগ্যতা আর মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান আদর্শের স্পিরিট-সব হিসাব-নিকাশেই নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে অগ্রভাগে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে তাঁর নাম। এরই মধ্যে দিয়ে শুরু হলো ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুরের এই কৃতি সন্তানের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আলোকোজ্জ্বল নতুন এক অধ্যায়ের। সেনাবাহিনীর সিজিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সততা ও পেশাদারিত্বের পুরস্কার পেয়েছেন। এরই ফলে আগামী তিন বছর সেনা সদর দপ্তরের হেলমেট ভবনে বসবেন নতুন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সেনাপ্রধান হিসেবে তাঁর সর্বোচ্চ সম্মান ও প্রাপ্তি কাছের থেকে দূরের মানুষকেও করেছে আনন্দ উদ্দীপ্ত।

অভিনন্দের জোয়ারেই ভাসছেন নতুন সেনাপ্রধান
যোগ্যতার সব মাপকাঠিতেই নিজেকে সেরা প্রমাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে শেষ হাসি এখন ওয়াকার-উজ-জামান এর মুখেই। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সুহৃদ-সহকর্মী থেকে শুরু করে অগণিত মানুষের অভিনন্দের জোয়ারেই ভাসছেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আদেশ জারির পরপরই ফেসবুক-এক্সে (সাবেক টুইটার) শুরু হয় অভিনন্দন পর্ব। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে ফেসবুকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। সেখানে শোভা পাচ্ছে ভাবী জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন সেনাপ্রধান হিসেবেও যোগ্য অভিভাবকের মতোই মেধার কিরণের ঝলকানি আর প্রাণময়ী উষ্ণতায় নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হবেন তিনি। নিজের কর্মমুখর জীবনের অতলস্পর্শী হৃদয়মুখরতার গাম্ভীর্য থেকে খুঁজে আনবেন মহিমান্বিত নান্দনিকতা। এক জ্যোতির্ময়ের পরশমণি হয়ে ধরা দিয়েছেন আলোকময় ক্যারিয়ারের পুরো সময়। আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িকতা, বিচিত্র সৃষ্টির অভিজ্ঞতা, উন্নত রুচিবোধ ও পরিণতবোধের এক নবদ্যুতির আলোকে অসাধারণ সৃজনক্ষমতায় এক নিরন্তর গতিপ্রবাহকেই সন্নিবেশিত করবেন দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিভূ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নতুন এ সেনাপ্রধান।

কালের আলো/এমএএএমকে