নেশার টাকা জোগাড় করতে অপহরণের পর খুন, নানা কৌশলেও হলো না শেষ রক্ষা

প্রকাশিতঃ 4:54 pm | June 25, 2024

পাবনা প্রতিনিধি, কালের আলো:

ছাত্রাবাসের পাশের বাড়ির ছেলের সঙ্গেই ফ্রি-ফায়ার গেম, আড্ডা ও ধুমপান করতেন। কিন্তু আগের মামলার খরচ, ছাত্রাবাসের বকেয়া এবং মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে সেই বন্ধুসূলভ প্রতিবেশিকেই অপহরণ করলেন। কিন্তু তাতে সুবিধা আদায় করতে না পেরে তাকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে দেওয়া হলো টিনের ট্যাংকে। নিজেদের আড়াল করতে নেন নানা কৌশল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। শেষে পুলিশের হাতে ধরা পরতে হলো ২ আসামিকে।

ঘটনাটি পাবনার ঈশ্বরদীর চাঞ্চচল্যকর কিশোর তপু হত্যাকাণ্ডের। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় ঘটনায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন— পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জয় (২০) এবং ঈশ্বরদীর মাশুরিয়া পাড়ার ঈসা খালাশি (১৯)। এঘটনায় সোহেল নামের আরেক আসামি পলাতক। নিহত তপু মাশুরিয়া পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ জুন দুপুরে ঈশ্বরদীর মশুড়িয়া কলেজ পাড়ার কিশোর তপু (১৪) নিজ বাড়ি থেকে বাহির হয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর অজ্ঞাত অপহরণকারী কিশোর তপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তপুর বাবাকে ফোন করে তপুকে অপহরণ করা হয়ে বলে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ৭ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তপুর খোঁজ না পাওয়ায় এঘটনায় তপুর মা বাদী হয়ে পরদিন থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মূল আসামিদের শনাক্ত করা হলেও ভিকটিমকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে গত ২২ জুন মশুড়িয়াপাড়ার অরন্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় এক টিনের ট্যাংক থেকে তপুর অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ঢাকায় পালানোর সময় পাবনা শহরের ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ট থেকে প্রধান অভিযুক্ত জয়সহ ২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, তারা ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে অরন্য ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন। ভুক্তভোগী তপুর বাড়ি ছাত্রাবাসের পাশেই হওয়ায় তারা এক সঙ্গে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলতেন। আড্ডা ও ধুমপান করতেন। জয় ইতোপূর্বে আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় মামলার খরচ এবং ছাত্রাবাসের খরচ এবং মাদক সেবনের জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সোহেল ও ঈসার সঙ্গে তপুকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কৌশলে তপুকে ছাত্রাবাসে ডেকে এনে জিম্মি করেন। তপু আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে তারা চাকু দিয়ে হত্যা করেন এবং বেল্ট দিয়ে তার হাত বেঁধে এক ট্যাংকে ভরে রাখেন। পরবর্তীতে আসামি জয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলফোন দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন। এছাড়াও আসামিরা ঘটনা আড়াল করতে নানান কৌশল অবলম্বন করেন কিন্তু গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ তাদের শনাক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম, ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ