কক্সবাজারে বিশ্বমানের তারকা হোটেল ফেলে পুলিশ অফিসার্স মেসে আইজিপি!
প্রকাশিতঃ 4:45 am | February 16, 2019
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
সহজ-সরল, নিরহঙ্কার মানুষ হিসেবে পরিচিত পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থেকেও পা দু’টো সব সময় মাটিতেই রেখেছেন। তাঁর অতি সাধারণ জীবন প্রকারান্তরে নিজের অসাধারণ ব্যক্তিত্বেরই পরিচয় বহন করে।
দৈনন্দিন জীবনে তাঁর মিতব্যয়িতায় অবাক না হয়ে কোন ওপায় নেই যেন! নিরাভরণ সাদামাটা জীবনে পেশাগত দায়িত্ব তাঁর কাছে পবিত্র ইবাদত। এসব নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আবারো নিজের সাধারণ থাকার অনন্য এক উদাহরণের অবতারণা করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
স্থানীয় টেকনাফের ১০২ ইয়াবা কারবারীর আত্নসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকেই কক্সবাজারে রয়েছেন পুলিশের আইজি। পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই নগরীতে একাধিক বিশ্বমানের তারকা হোটেল থাকলেও সেইদিকে পা বাড়াননি পুলিশ বাহিনীর এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
নিজের থাকার জন্য তিনি বেছে নিলেন স্থানীয় লাবণী পয়েন্টের পুলিশ অফিসার্স মেসকে। মাত্র হাজার টাকা ভাড়ায় এই মেসে থেকেই সবাইকে চমকে দিয়েছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ফলে একজন সাধারণ পুলিশ কনস্টেবল থেকে কর্মকর্তাদেরও এই বিষয়টি রীতিমতো অবাক করেছে।
একবাক্যে এই বিষয়টিকে বাহিনীর সবাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তাঁর সৃষ্টিশীলতা, সাদামাটা যাপিত জীবন এবং কর্ম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গোটা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্যই অনুকরণীয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে হালের চিরায়ত ধারা অনুযায়ী এই অসাধারণ বিষয়টিকে ‘ফোকাস’ করতে মোটেও উৎসাহী নন আইজিপি। বরং নীরবে-নিভৃতে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন স্বল্পভাষী এই মানুষটি। পাশাপাশি একজন আপাদমস্তক, পরিচ্ছন্ন, অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে সেবকের ভূমিকায় অনন্য অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই।
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত মধ্যরাতে মোবাইলে কথা হচ্ছিলো কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ফরিদ উদ্দিন খন্দকারের সঙ্গে। কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, ‘একজন অসাধারণ মানুষ হয়েও সাধারণ জীবন যাপন করেন আইজিপি স্যার। ইচ্ছা করলেই বিলাসবহুল রিসোর্ট বা বিশ্বমানের তারকা হোটেলে উঠতে পারতেন।
কিন্তু মাত্র এক হাজার টাকা ভাড়ায় অফিসার্স মেসেই উঠেছেন। তিনি একটি আবেগ এবং ভালোবাসার নাম। তাঁর জীবন দর্শন থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়েও কক্সবাজার সফর করেছিলেন আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। উদ্বোধন করেছিলেন চকরিয়া থানা, উখিয়া সার্কেল ও ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের নব-নির্মিত ভবনের। ওই সময়েও স্থানীয় পুলিশ অফিসার্স মেসেই ওঠেছিলেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা কালের আলোকে জানান, সাধারণত কেউ সমুদ্র নগরীতে পা ফেলেই বিলাস বহুল রিসোর্ট বা হোটেলে ছুটেন। নিজের আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটান। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পুলিশ প্রধান। সততা, নির্মোহতা ও নিষ্ঠায় তিনি অনন্য।
একই জেলার আরেক পুলিশ কর্মকর্তা কালের আলোকে জানান, আইজিপি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত হোটেল ছেড়ে সাধারণভাবেই কক্সবাজারে সময় কাটাচ্ছেন। আবার সাধারণ খাবার-দাবারেই তিনি অভ্যস্ত। সততা ও নিলোর্ভ আচরণের মধ্যে দিয়ে তিনি পুলিশ বাহিনীকে ক্রমশ বদলে দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় স্থানীয় টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠ অনুষ্ঠিতব্য ইয়াবা কারবারীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি।
পুলিশ প্রধান ছাড়াও এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। এই অনুষ্ঠান শেষে এদিন বিকেলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
কালের আলো/এএ