শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের টাকার আর্থিক ঘাটতি ৪৩২ কোটি টাকা

প্রকাশিতঃ 7:00 pm | July 16, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

নিয়ম অনুযায়ী ২৫ বছর এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি থেকে অবসরে গেলে সর্বনিম্ন সাড়ে ৭ লাখ টাকা অবসর সুবিধা পান। আর একজন অধ্যক্ষ প্রায় ৫০ লাখ টাকা পান। প্রতিমাসে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে অবসর সুবিধাবোর্ডে জমা হয় ৭৩ কোটি টাকা। এই হিসেবে বাৎসরিক জমা হয় ৯শ কোটি টাকা। তবে এর বিপরীতে বাৎসরিক চাহিদা ১৩শ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতিবছরে আর্থিক ঘাটতি প্রায় ৪৩২ কোটি টাকা।

২০০২ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড গঠন হয়। জানা গেছে, এখন ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত জমা পড়া আবেদনের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি মাসের (জুলাই) আবেদন নিষ্পত্তি করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতি মাসে অবসর সুবিধার জন্য গড়ে ৩ থেকে সাড়ে তিনশ আবেদন জমা হয়। ধারাবাহিকভাবে সেগুলো বোর্ডের পক্ষ থেকে নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে মৃত্যুজনিত, হৃদরোগসহ বড় ধরণের অসুস্থতা, হজে যাওয়ার জন্য আগ্রহীদের আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কখনো কখনো নিষ্পত্তি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত (২০২৪ সালের জুলাই) ৪০ হাজার আবেদনের বিপরীতে অবসর সুবিধা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। সে হিসেবে গত চার বছরের অনিষ্পন্ন আবেদনের অনুকূলে আর্থিক সুবিধা দিতে হলে দরকার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সবশেষ শিক্ষক-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি পাওয়ায় অবসরের টাকাও বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। একজন শিক্ষকের প্রতিটি ইনক্রিমেন্টের বিপরীতে অবসর ভাতায় দিতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একজন শিক্ষক-কর্মচারী অন্তত সাতটি ইনক্রিমেন্ট পান চাকরিকালে। এই ইনক্রিমেন্টের কারণে তিনি অবসর ভাতায় ১৩ লাখ ৪ হাজার ১০০ টাকা বেশি পান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারের কাছে শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তি কমাতে এক হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চেয়েছিল অবসর সুবিধা বোর্ড। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন অবসর বোর্ডের কর্মকর্তারা।

শিক্ষকদের এসব কষ্টের কথা নিয়ে সংসদে কথা বলার পর সংশ্লিষ্টরা বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ নিয়ে ১৬ সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি প্রাথমিকভাবে প্রথম বৈঠকে আগামী তিন বছরের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের সকল পাওনা পরিশোধের রোডম্যাপ নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়। এই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মো. রবিউল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি কাজ করছি। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কীভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের কষ্ট লাঘব করা যায় সেজন্য কাজ করছি।’

এসব বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অবসরে গিয়ে টাকা না পাওয়া অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর হয়রানির কথা প্রতিদিন শুনতে হয়। আশা করি সংকট কেটে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্ভোগ কষ্ট দূর করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম