শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করলেন সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 12:06 am | August 23, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় তিনি শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন। ব্যবসায়ী নেতারাও সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে সেনাবাহিনীর সময়োচিত ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো.মইন খানসহ সেনাসদর ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, মোঃ জসিম উদ্দিন, তপন চৌধুরী, আশরাফ আহমেদ, খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও নাসের এজাজ বিজয় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভার আদ্যোপান্ত
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সভার শুরুতেই সেনাবাহিনী প্রধান তাঁর বক্তব্যে দেশের অর্থনীতিতে ব্যবসায়িক সমাজের গুরুত্ব ও অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরেন। এছাড়াও সেনাবাহিনী প্রধান শিল্প-কারখানা চালু রাখার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত করেন।
এরপর ব্যবসায়িক নেতাদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম তাঁর বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে সেনাবাহিনীর সময়োচিত ভূমিকা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানায় উৎপাদন অক্ষুণ্ন রাখাসহ আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করায় সেনাবাহিনীর ভূঁয়সী প্রসংশা করেন। এছাড়াও তিনি ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা প্রদান, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন, অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠতর করা, আমদানি-রপ্তানিসহ নিরবিচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিকরণ, সকল বন্দর ও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সকল মহাসড়কের নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করেন। সেই সঙ্গে তিনি শিল্প-কারখানা ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি রোধ, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ইন্ডাস্ট্র্রিয়াল পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকিসমূহ নিরসনের ব্যবস্থা, অগ্নি-সংযোগের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কল-কারখানাসমূহ পুনরায় চালুকরণ এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এসময় সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা একটি উন্মুক্ত পরিবেশে তাদের মতামত ও পরামর্শ উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী প্রধান ব্যবসায়ী নেতাদের শিল্প-কলকারখানা ও শিল্পাঞ্চলসমূহে নিরাপত্তা প্রদান, চাঁদাবাজি বন্ধ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনসহ বিবিধ কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শিল্পাঞ্চলসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গত ৯ আগস্ট সেনাবাহিনীর শিল্পাঞ্চল নিরাপত্তা সেল গঠন করা হয়। শিল্পাঞ্চল নিরাপত্তা সেলের তত্ত্বাবধানে শিল্প পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সহায়তায় অতি দ্রুত সাময়িক বন্ধ থাকা কারখানাসমূহ পুনরায় চালু হয় এবং আস্থার ও নিরাপদ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিল্পাঞ্চলসমূহের নিরাপত্তাকল্পে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
কালের আলো/ডিএস/এমএম