পাখির চোখে বন্যাদুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণ সেনাপ্রধানের; উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা
প্রকাশিতঃ 11:07 pm | August 23, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
পাখির চোখে দেখলে দেশের গোটা পূর্বাঞ্চল যেন এক দ্বীপাঞ্চল। উজানের পানিতে ভাসছে ফেনী ও কুমিল্লার বিস্তীর্ণ জনপদ। বসতভিটা থেকে সড়ক সবখানেই বানের স্রোত। পানিবন্দি কয়েক লক্ষ মানুষ। ভয়াবহ বন্যায় সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ১৫ জন। কয়েক প্রজন্মের মানুষ এমন পানি দেখেননি কখনও। বিভীষিকাময় এমন সময়ে বন্যাদুর্গতদের জন্য বিবেক আর হৃদয়ের টানে পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা।
দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বরাবরই আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবারও স্থাপন করেছে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দিন-রাত একাকার করে সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে তিনি ফেনী ও কুমিল্লার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এদিন দুপুরে তিনি হেলিকপ্টারযোগে ফুলগাজী, পরশুরামসহ ফেনী ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন পাখির চোখে। উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
জানা যায়, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের হেলিপ্যাড থেকে সেনাপ্রধানের প্রথম গন্তব্য ছিল কুমিল্লা সেনানিবাস। উদ্দেশ্য বন্যা কবলিত এলাকায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ও প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হওয়া। কুমিল্লা পৌঁছানোর পরেই তাকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। সেখানে কার্যক্রম শেষে পুনরায় হেলিকপ্টারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা ও পরে ফেনীর ফুলগাজীর বন্যা কবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন।
এ সময় বিভিন্ন বাড়ির ছাদে যেসব মানুষ অবস্থান নিয়েছিল তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন সেনাপ্রধান। এরপর স্থানীয় পরশুরামে তিনি পর্যবেক্ষণ করেন সেনাবাহিনীর ত্রাণ কার্যক্রম ও উদ্ধার তৎপরতা। পরে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। এর আগে একই দিন সকালে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সেনাবাহিনীর সব সদস্যের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস, সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কুমিল্লার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমসহ সেনা সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭, ২৪ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা এলাকায় বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েনরত সেনাসদস্যরা নিরলসভাবে পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
কালের আলো/এমএএএমকে