সাঁজোয়া যান থেকে নিক্ষেপ: শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের নামে হত্যা মামলা
প্রকাশিতঃ 5:36 pm | August 25, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সাভারে গুলির পর পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে সেখান থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের নামে মামলা হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন নিহতের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।
বাদীপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান মারুফ ও সাকিল আহমাদ।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) আসাদুজ্জামান সাভার সার্কেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) আব্দুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) সাহিদুর রহমান, সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজামান, উপপরিদর্শক সুদীপ, হারুন অর রশিদ ও সাব্বির, সাভারের আন্দোলনে গুলি করে ভাইরাল হওয়া নড়াইলের বাবুল শরিফ (নারী পুলিশ সদস্যের স্বামী), সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব ও ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলার আরজিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এতে তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দেন। আসামি ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্রদের নির্মূল করার জন্য ছাত্রলীগ যথেষ্ট।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বামপাশে গুলি করে। বন্দুকের গুলিতে ইয়ামিনের বুকের বামপাশে অসংখ্য গুলির স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়।
এমতাবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকে। ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয় এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তার পায়ে পুনরায় গুলির নির্দেশ দেয়। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেয়। গুলিবিদ্ধ শাইখ ইয়ামিনকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে নিশ্বাস নিতে তখনও দেখা যায়। এমতাবস্থায় পুলিশ সদস্যরা ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের একপাশ হতে আরেক পাশ ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত না করে এবং তৎক্ষণাৎ কোনো মৃত্যুর সনদ না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের মরদেহ হস্তান্তর করে। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করিলেও পুলিশ বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করে এবং ইয়ামিন এর পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যদের ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মৃত্যু নিয়ে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে সংবাদ মাধ্যমে তথ্য দিতে বারণ এবং মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে ইয়ামিন এর পরিবার তাকে সাভার ব্যাংক টাউন কবরস্থানে দাফন করেন।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ