সর্বগ্রাসী বন্যাতেও সহানুভূতি আর দায়িত্ববোধে অবিচল সেনাবাহিনী

প্রকাশিতঃ 10:06 pm | August 26, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

চারদিকে থইথই পানি। বন্যায় তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। সহায়সম্বল ফেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মানুষ। অনেকে আবার নিরুপায় হয়ে বাড়ির ছাদ, টিনের চাল বা খোলা আকাশের নিচে নিয়েছেন ঠাঁই। নিঃস্ব এসব মানুষের মাঝে কেবলই বাঁচার আকুতি। রাত নামলেই বিদঘুটে অন্ধকার আর সুনসান নীরবতা। মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত সীমায় বন্যাদুর্গত এলাকা, প্রায় ৫২ লাখ মানুষ হয়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত।

সর্বগ্রাসী বন্যায় সীমাহীন দুর্ভোগ আর দু:সময়ে আবারও নিজেদের চিরায়ত ধারায় মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শত কঠিন প্রতিকূলতা ও দুর্যোগের মাঝেও তাঁরা অবিচল। মানবিকতার প্রোজ্জ্বল আভায় দুর্যোগ-বিপর্যয়ে একতাবদ্ধ করেছেন দেশকেও। নিখাদ দেশপ্রেম, হৃদয়ভরা মমতার টান, সহানুভূতি আর দায়িত্ববোধে জলে, স্থলে ও আকাশ পথে অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়ে অভাবনীয় আশাবাদ তৈরির মাধ্যমে জাগিয়েছে অভূতপূর্ব সাড়া। কোথাও গলা সমান পানিতে আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে থেকেই বন্যার্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে দেশপ্রেমিক সেনারা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধার কাজ। কখনও কাঁধে নিচ্ছেন ত্রাণের বস্তা। কখনও কোলে তুলে নিচ্ছেন মানুষকে।

দুর্যোগ কবলিত মানুষকে বাঁচাতে এ যেন অনন্য এক সংগ্রাম। জীবনবাজি রেখে তাঁরা নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ও আন্তরিকতার প্রমাণ দিচ্ছেন প্রতি মুহুর্তে। সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে তিনি ফেনী ও কুমিল্লার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সেদিন হেলিকপ্টারযোগে ফুলগাজী, পরশুরামসহ ফেনী ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন পাখির চোখে। উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন সেনাবাহিনীর সদস্যদের। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীকে এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

কুমিল্লা ও ফেনী জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় রবিবার (২৫ আগস্ট) সেনা সদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। এ সময় তিনি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানান।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোববার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জল, স্থল ও আকাশ পথে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। মানবতার সেবায় পরিচালিত এই অভিযানকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ ২১টি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ১৬ জন মুমূর্ষ রোগীকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন শিশু, ৬ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী, ২ জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী ও ৫ জন বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন।

আইএসপিআর আরও জানায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ২ হাজার ১৪৭ প্যাকেট ত্রাণ ফেনী সদর, ফাজিলপুর, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, পরশুরাম ও মধুগ্রাম এলাকায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। দেশের এই দু:সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলস প্রচেষ্টা ও সেবার মাধ্যমে যে ভালোবাসা ও সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদমাঝের আরও শক্তপোক্ত করেছে নিজেদের স্থায়ী আসন।

কালের আলো/এমএএএমকে